“আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দেব পিঁড়ে, জলপান যে করতে দেব শালি ধানের চিঁড়ে। শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই, বাড়ির গাছের কবরী কলা গামছা বাঁধা দই।”
এ কবিতা আমাদের সকলেরই জানা। কবির কলমে উঠে এসেছে গামছার প্রসঙ্গ। আর তা নিয়ে যদি বলতেই হয় তাহলেই চলে আসে বসিরহাটের কথা। কলকাতা থেকে অদূরে অবস্থিত এই জনপদ। প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র। এখানেই এক দারুণ সৃষ্টি যার নাম শোনা যায় বিদেশেও। গামছা, সাধারনত যা ব্যবহার করা হয় ভিজে গা বা ঘাম মোছার ক্ষেত্রে। ‘গামছা’ শব্দটার উৎপত্তি ‘গা মোছা’ থেকেই। চেক ডিজাইন অথবা স্ট্রাইপ ডিজাইনের গামছা বেশি জনপ্রিয়। বাজার থেকে শুরু করে ট্রেনে বাসে সুতির গামছা অত্যন্ত পরিচিত। গামছা বেশিরভাগ লাল রঙেরই হয়, তবে আরো অন্যান্য রঙের গামছাও পাওয়া যায়।
আর সেই গামছার জন্য বিদেশের দরবারে নাম পৌঁছে গেছে বসিরহাটের মুন্সীর গামছার। প্রায় ১৫০ বছরের ধরে চলে আসছে এই গামছা বোনা। অবিভক্ত বাংলার এ এক অন্যতম নিদর্শন। নিজ বাস ভবনে নিজের হাতেই তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে তৈরি করেন গামছা। যা ইতিমধ্যেই মন জয় করেছে সবার। আর এর কারণ, মেশিনের যুগে হাতের কাজ। তাঁতে বোনা খাঁটি সুতির গামছা। যার দাম খুব সামান্য। ৫০ অথবা ৬০ টাকায় পাওয়া যায় এক পিস গামছা।
গামছার ব্যবহার জড়িয়ে আছে পুজোর সাথেও। ঘটের ওপর গামছা দেওয়ার রীতি বাঙালির ঘরে আজও বর্তমান। আর যেটা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যনীয় তা হলো, কাঁধে গামছা ফেলে তাস পেটানো অথবা চাষির মাথায় লাল গামছা। তবে শুধুমাত্র বসিরহাট নয় গামছার জনপ্রিয়তা আসাম, বিহার, পূর্বাঞ্চল প্রভূত জায়গায় রয়েছে।
আর সম্প্রতি গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডেও গামছা নিজের জায়গা করে নিয়েছে। বিভিন্ন মডেলদের গামছা নিয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। কখনো গামছা প্রিন্টেড শাড়ি আবার কখনো প্যান্ট বা শার্ট অথবা অন্য কোনো পোশাক। আর এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘গ্ল্যাম গামছা’। অন্যদিকে গামছাকে উড়িষ্যাতে রুমাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাথায় হোক বা কাঁধে, গা মোছা হোক বা রুমাল, এই গামছা ব্যবহারে যেমনি আরাম, তেমনি এটা টেকসই। অনেকটা ওই ‘দামে কম, মানে ভালোর’ মতো।
Discussion about this post