“হায় রে মজার তিলের খাজা, খেয়ে দেখলি না মন কেমন মজা।” গানটা ফকির লালন শাহের কথা ছিল কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে জনশ্রুতি থেকেই তিলের খাজা নিয়ে এমন গান চলে আসছে। গানের মতোই মজাদার কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী অন্ততঃ ৫০০ বছরের পুরনো তিলের খাজা। “খেতে ভারি মজা, তিলের খাজা” – এ কথা হামেশাই শোনা যায় পথে ঘাটে। আর এই তিলের খাজা স্বাদে অসামান্য এক মিষ্টি। গ্রামে গঞ্জে এ মিষ্টির জনপ্রিয়তাকে টক্কর দেওয়া বেশ চাপের। এ খাজা দেখতে হালকা চ্যাপ্টা আর লম্বা ধরনের। যার গোটা দেহ জুড়ে মাখানো থাকে খোসা ছাড়ানো তিল আর ভেতরটা ফাঁপা।
এ অনবদ্য মিষ্টি উঠে এসেছে একেবারে বাংলাদেশের কোল থেকে। শোনা যায় ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে এ মিষ্টির উৎপত্তি। অবিভক্ত বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার তিলের খাজা, নাম শুনলেই জিভে জল। জনপ্রিয় এই খাবারের ইতিহাস বলছে, কুষ্টিয়ার একটি খামারে কাজ করানোর জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তেলি নামক এক সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য নিয়ে আসে। যারা ঐতিহ্যগতভাবে তেল নিঃসরণের পেশায় যুক্ত ছিলেন। স্থানীয়রা এই সম্প্রদায়ের নামানুসারেই এ মিষ্টির নাম দেয় তিলের খাজা। আবার এও শোনা যায়, তিলের বীজের মিষ্টান্নের মূল উৎস চীন। কারণ জাওটাং একটি বিখ্যাত পুরনো চিনা মিষ্টির স্বাদ এবং তৈরির প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম।
তবে চাইলে আপনিও বানিয়ে ফেলতে পারেন তিলের খাজা। আর তার জন্য উপকরণ হিসেবে লাগবে দুধ, চিনি, তিল, এলাচ আর জল। একটা পাত্রে প্রথমে চিনি, জল, দুধ ইত্যাদি কড়াইয়ে দিয়ে দশ থেকে বারো মিনিট ফোটাতে হবে। এরপর এই উত্তপ্ত মিশ্রণ বা স্বচ্ছা চিনির লাইকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য পাত্র হতে ঢেলে রাখতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে এই আঠালো চিনির ওই মিশ্রণ বা লই উঠিয়ে একটি আংটায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এবার ওই মিশ্রণটি এমনভাবে টানতে হবে যাতে আকারটা লম্বা হয়। আর ভেতরের দিকটা হবে ফাঁকা। অনেকগুলো সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকতে হবে গোটা খাজা জুড়ে। এবার কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিয়ে, টুকরো করে কেটে নিলেই তৈরি তিলের খাজা।
মিষ্টি মুখে পড়লেই মনে যেন আনন্দ আসে। তাই দেরি না করে চটপট তৈরি করে ফেলুন তিলের খাজা। একেবারে কুষ্টিয়ার স্বাদ নাই বা হলো, নিজের হাতের মিষ্টির স্বাদ তো হবেই। এ খাজা রাস্তা ঘাটে ফেরি হতে দেখা যায় ঠিকই তবে বাড়িতে তৈরির মজাই আলাদা। শুধু রান্না নয় এ যেন এক শিল্প। চর্চার ফলে যা হয়ে উঠেছে স্বাদে একদম পরিপাটি।
Discussion about this post