মধ্য হাওড়ায় প্রতিষ্ঠিত তিব্বতী বাবার বেদান্ত আশ্রমের কথা বর্তমানে অনেক হাওড়াবাসীর কাছেই অজানা। হাওড়ার বিশিষ্ট গবেষক সন্দীপ বাগের লেখা থেকে জানা যায়- আশ্রম ছাড়াও এখানে রয়েছে বেদান্ত লাইব্রেরী। এই বেদান্ত লাইব্রেরীতেই বাবার যোগসাধনা সম্পর্কিত দুষ্প্রাপ্য কিছু তিব্বতি পুঁথির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এই পুঁথি গুলি। দালালপুকুরে এই আশ্রমের পাশের রাস্তাটিও ‘তিব্বতী বাবা লেন’ নামে নামাঙ্কিত। তিব্বতী বাবা ছিলেন যথেষ্ট প্রচারবিমুখ। জীবনের শেষদিকে তাঁর কিছুটা সময় কলকাতায় অবস্থান।
তাঁর জীবদ্দশায় দুটি আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- একটি হাওড়ার দালাল পুকুর এলাকায় এবং অন্যটি বর্ধমানের পালিতপুর গ্রামে। তাঁর জীবদ্দশার শেষ লগ্নে হাওড়া নিবাসী বিষ্ণুপদ চট্টোপাধ্যায় (যার পরে নাম হয় ভুবন স্বামী) হাওড়ায় জমিটি কেনেন। ১৯২৯ সালে তিব্বতী বাবা এলে আশ্রম নির্মাণের সূচনা করা হয়।এই আশ্রম দালালপুকুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে ‘তিব্বতীবাবা বেদান্ত আশ্রম’ নামেই পরিচিত। ১৯২৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রমটির মূল মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা হয় ঢাকার এক ভক্তর হাতে। পরে আশ্রমের আরও জমি কলকাতার এন্টালি থেকে এক ব্যক্তি কিনেছিলেন বলে জানা যায়। আর বর্ধমানের পালিতপুরের আশ্রমটি নির্মাণের জন্য বর্ধমানের রাজা স্বয়ং কয়েকশো বিঘা জমি দান করেন তাঁর যোগসাধনায় মুগ্ধ হয়ে। এই অশ্রমটি প্রজ্ঞা মন্দির নামে পরিচিত।
জানা যায় তিব্বতী বাবার কাছে কোন ভক্ত যদি ওনার পূর্বাশ্রমের নাম বা জীবনের কথা জানতে চাইতেন তাহলে তিনি বলতেন “সময় হলে সবই প্রকাশ পাবে”। লোকমুখে প্রচারিত তিব্বতী যোগসাধনায় চল্লিশ বছরের বেশি মগ্ন ছিলেন বলে তাকে তিব্বতী বাবা বলা হয়, তাঁর আসল নাম ছিল নবীন চট্টোপাধ্যায়। ওনার জন্মস্থান নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে – তাঁর জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে রচিত “ভারতের সাধক ও সাধিকা” গ্রন্থে লিখিত আছে আসামের শিলচরে ওনার জন্ম, আবার শ্রীমত আখন্ডানন্দ ব্রহ্মচারীর মতো তিব্বতী বাবার শিষ্যদের লেখা থেকে জানা যায় যে, ওনার জন্মস্থান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে।
ভাবলে অবাক হবেন এই মহান সাধকের নিরাময় ক্ষমতা বহু ভক্তদের কঠিন শারীরিক সমস্যা নিরাময় করত। ওনার জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে জন্মদিনে কোনো উৎসব অনুষ্ঠিত না হলেও ২রা অগ্রহায়ণ ওনার মৃত্যুদিনে প্রতিবছর হাওড়া ও বর্ধমানের পালিতপুরে উৎসব পালিত হয়। প্রতি বছর এই দিনে শত শত ভক্তের সমাগমে বিশেষ পুজো পাঠ, হোম-যজ্ঞ এবং নরনারায়ণ সেবার আয়োজন করা হয় এই আশ্রমে। কংক্রিটের শহর হাওড়ার মধ্যেই কোথাও যদি আশ্রমিক পরিবেশ উপভোগ করতে চান তাহলে যেতেই পারেন হাওড়ার দালাল পুকুরের তিব্বতী বাবার আশ্রম।
Discussion about this post