১৮৩১ সালে ব্রিটিশ রয়েল নেভি থেকে বের হল একটি জাহাজ। তার উদ্দেশ্য, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অজানা দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র তৈরি। জাহাজের বিজ্ঞানীদের মধ্যেই ছিলেন একজন প্রকৃতি-বিজ্ঞানী। তাঁর কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাণীদেহের নমুনা সংগ্রহ করা। পাঁচ বছর জাহাজে ঘোরার পর জাহাজ এসে ভিড়লো দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের পশ্চিমের কিছু দ্বীপপুঞ্জে। সেখানে বিজ্ঞানী দেখলেন একই প্রজাতির প্রাণীদের দেহে অদ্ভুত বৈপরীত্য। এই ভিন্নতায় তিনি বিস্মিত। সমুদ্রযাত্রা শেষে তিনি ১৮৫৯ সালে লিখলেন ‘দ্য অরিজিন অব স্পিসিস’। সেই বিজ্ঞানীর নাম স্যার চার্লস ডারউইন। আর দ্বীপের নাম? গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ।
অসাধারণ জীববৈচিত্রের এবং অনবদ্য ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ইউনেস্কো গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দ্বীপে রয়েছে সামুদ্রিক ইগুয়ানা, জায়ান্ট কচ্ছপ, নীল পায়ের বুবি পাখিসহ বিরল প্রজাতির প্রাণী। যাদের পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। দ্বীপের মধ্যে আছে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। রয়েছে ৮০০ ধরনের শামুক জাতীয় প্রাণী। এর মধ্যে ঝিনুক, স্কুইড ও অক্টোপাসও রয়েছে। রয়েছে বিশালদেহী হোয়েল শার্ক।
ক্যাপ্টেন ফিৎজরয়ের নেতৃত্বে চার্লস ডারউইন এই দ্বীপে এসেছিলেন ১৮৩৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর। তাঁরা মূলত চারটি দ্বীপে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছিলেন। দ্বীপ চারটি হল চ্যাথাম, চার্লস, অ্যালবেমার্ল এবং জেমস আইল্যান্ড। ভূকম্পন এবং অগ্ন্যুত্পাতের ফলে সৃষ্ট গ্যালাপাগোস প্রায় ১৩ টি দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্রতিটি দ্বীপে কচ্ছপ এবং মকিংবার্ডগুলির প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন রকমের। তাই দেখেই ডারউইন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
ডারউইনের বিবর্তনের সুত্রের মত ঐতিহাসিক আবিষ্কারের পিছনে কাজ করেছিল এই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অদ্ভুত জীববৈচিত্র। দ্বীপপুঞ্জটি দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর উপকূল থেকে প্রায় ১০০০ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। রাজনৈতিকভাবে অঞ্চলটি পড়ে ইকুয়েডরের আওতায়। প্রাণীদের এই সুবিশাল প্রাচুর্য থাকায় গালাপাগোসকে প্রাণীজগতের মাতৃভাণ্ডার বলা হয়। সারা পৃথিবীতে যেখানে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীর অবলুপ্তি ঘটে চলেছে, সেখানে এই অঞ্চল বিরল প্রজাতির প্রাণীদের দ্বারা সম্পূর্ণ।
Discussion about this post