“ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়” ছোটবেলা থেকে আমরা প্রায়ই এই কথাটা শুনি। তবে আজকাল নতুনত্বের চাপে সাধারণ কিছু স্বপ্ন দেখা মানুষেরা তা পূরণ করতে পিছপা হয়ে পড়েন। কারণ স্বপ্ন দেখলেই তো আর পূরণ হচ্ছে না! তার জন্য চাই পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর সততা। আজ তেমনিই পরিশ্রমী দুই ভাইয়ের লড়াকু মনোভাবের একটা গল্প জেনে নিন।
সালটা ২০১৯। কলকাতার নারকেলডাঙার দুই জোয়ান নাফিস আলি ও নাজিব আলি। সদ্য বি. কম পাশ করার পর চাকরির আশায় স্রোতে গা না ভাসিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবেছিল৷ ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও তিন লাখ টাকা! এই তিনটে জিনিসকে পুঁজি করে হাওড়ার বাঁকড়া অঞ্চলে ছোট্ট একটা দোকান চালু করেছিল তারা। তবে তাদের হাতের পুঁজির পরিমাণটা ছিল নিতান্তই কম, মাত্র তিন লাখ টাকা। বর্তমানে দুর্মূল্যের বাজারে একটা দোকান ভাড়া নিতেই হিমশিম খাওয়ার মত অবস্থা। কিন্তু বিনা যুদ্ধে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার পাত্র এই দুই ব্যবসায়ী একেবারেই নন। বাঁকড়া মোড়ে ছোট্ট একটা দোকান নিয়ে এইচ এফ সি-র মত লোকাল একটি ব্র্যান্ডের প্রথম আউটলেট খুলে ফেললেন। লক্ষ্য হল কে এফ সি-এর মত কোয়ালিটি রেখে কম দামে সাধারণ মানুষের হাতে তাদের প্রিয় খাবার তুলে দেওয়া৷ সেই লক্ষ্য নিয়ে নাফিস আর নাজিবের শুরু হল যাত্রা!
ব্যবসা সবেমাত্র তার শাখা- প্রশাখা মেলে বিস্তারের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই করোনার করাল গ্রাসে শুরু হল লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেল প্রথম আউটলেটের ঝাঁপ। কিন্তু হার মানেননি দুই ভাই। লকডাউনে ফাঁকা সময়ে তারা এইচ এফ সি কে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছিল৷ লকডাউনের পরে ব্যবসাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকেই মন দিয়েছিল তারা। কষ্ট করলে কেষ্ট তো মিলবেই! সেটাই প্রমাণ করল এই দুই তরুণ নাফিস আর নাজিব। বাঁকড়ার সেই ছোট্ট আউটলেট থেকে আজ হাওড়া, হুগলি ও কলকাতা মিলিয়ে নয় নয় করে তাদের ৩২ টা আউটলেট। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যে বর্ধমানেও খুলতে চলেছে এইচএফসি।
কেএফসি’র মত নামীদামী আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পাশে এরকম লোকাল একটি ব্র্যান্ডের টিকে থাকার লড়াই প্রশংসার তো বটেই। তার ওপর স্পর্ধার ও দাবি জানায়। ধীরে ধীরে রাজ্যের বাইরেও নিজেদের ব্র্যান্ড ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নও দেখছে দুই ভাই। তাদের মতে, ফুড বিজনেসে সঠিক জায়গা বাছা হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, এইচ এফ সি-র প্রথম আউটলেট হিসাবে বাঁকড়াকে বেছে নিয়ে তারা কোনো ভুল করেনি। বর্তমানে বাঁকড়ায় ছোট দোকানের পরিবর্তে বড় আউটলেট হচ্ছে, যার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। এখন আমাদের উচিত কে এফ সি- র মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড গুলোর ন্যায় উঠতি দেশি ব্র্যান্ডগুলোকেও আপন করে নেওয়া। তবেই হবে তাদের পরিশ্রমের সার্থকতা।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – অমল কুণ্ডু







































Discussion about this post