ঠিক যেন অচলায়তনের ‘পঞ্চক’! দীর্ঘদিন ধরে জং ধরা বন্ধ জানলা গুলো খুলে দিলেন এক ধাক্কায়। বারুইপুরের সুমিত মন্ডল। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও তিনি একজন স্বপ্নের কারিগর! সযত্নে লালন করেছেন সেই স্বপ্নের বীজকে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, পরিচর্যার পর সেই বীজ এখন অঙ্কুরিত হওয়ার অপেক্ষায়। সুমিত বাবুর ‘স্বপ্ন পাঠশালা’র দুয়ার অবশেষে খুলতে চলেছে তাঁর প্রিয় কচিকাঁচাদের সামনে। এ যেন কিশোর কবির ‘আগামী’র এক বাস্তব প্রতিফলন!
ডেইলি নিউজ রিলকে সুমিত বাবু জানান, বাস্তবে কোনোদিন স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন এটা কখনো ভাবেননি। তবে ছোটো থেকে বাবাকেই আদর্শ হিসেবে মেনে এসেছেন। তাঁর বরাবরই একটি বিদ্যালয়ের স্বপ্ন ছিল, যেখানে রোজ পড়তে আসবে তাঁর স্বপ্ন সেনারা। বাবার আদর্শের ছায়ায় আজ মহীরুহে পরিণত সেই স্বপ্নের বীজ। তার উপর করোনা আবহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্র ও। বেশিরভাগ স্কুল কলেজ অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু করলেও পিছিয়ে থাকছে আর্থিকভাবে দুর্বল ছেলেমেয়েরা। এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ভীষণভাবে দরকার, এই ভাবনাই তাঁকে আরোও উদ্বুদ্ধ করে। তবে দুঃখের বিষয়, সুমিত বাবুর বাবা পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছেন তিন বছর হল। কিন্তু তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছের কান্ডারী সুমিত বাবু থেমে থাকেননি। উদ্যম আর প্রেরণার সাথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সেই তরী। বাবার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ১১ জানুয়ারিতেই পথ চলা শুরু হল পাঠশালার। স্থান স্বপ্ন সন্ধান ভবন, কাটাখাল, বারুইপুর। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠনের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে বিদ্যালয়।
তবে প্রথমেই বললাম, অচলায়তনের বাইরে গিয়ে এই পাঠশালা। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে হাতেকলমে শিক্ষা দানই তাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রাথমিক মূল্যবোধ, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি এই বিষয়গুলো সেখানে বাদ যায় কি করে! তবে সুমিতবাবু ‘স্বপ্ন সন্ধান’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ২১ বছর থেকে! এবং তার জন্মলগ্ন থেকে তিনি নিজেও সেখানে শিক্ষাকতার সঙ্গে যুক্ত। তবে এই পাঠশালা নির্মাণের স্বপ্নে তিনি পাশে পেয়েছেন তাঁর শিক্ষক থেকে ছাত্রছাত্রীদেরও। আজ পাঠশালার উদ্বোধনের সঙ্গে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে বই খাতা, পেন্সিল আর শুকনো খাবারও দেওয়া হবে। তবে আগামী শনিবার থেকে ৪০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ১৫ জন শিক্ষককে নিয়ে পাঠশালায় মূল পঠনপাঠন শুরু হবে। এলাকার লোকজনও যথেষ্ট উৎসাহী নতুন পাঠশালাকে ঘিরে।
যেখানে ১৭% ছাত্রছাত্রী স্কুলের পাঠ চুকিয়ে রোজগারের পথে পা বাড়িয়েছে এই মহামারী আবহে। এহেন অবস্থায় সুমিত বাবুর এই উদ্যোগ সত্যিই যেন মনে করিয়ে দেয় উদয়ন পন্ডিতের কথা! যার মূল মন্ত্রই “তমসা হতে আলো, মন্দ হতে ভালো”, তাকে আটকায় কার সাধ্যি!
Discussion about this post