বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব বলে কথা,সেখানে জাত-ধর্ম আবার কী! উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর শহরে এমন ভাবেই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা একসাথে মেতে ওঠেন মাতৃ আরাধনায়। প্রায় আড়াইশো বছর আগে ইসলামপুরের পুরাতন পল্লীর মন্ডল পরিবারে দুর্গাপুজোর সূচনা। রাধাকান্ত মন্ডলের হাত ধরেই এই পূজার প্রচলন। মায়ের সেই মৃন্ময়ী প্রতিমার কাঠামো তৈরি করেছিলেন মহম্মদ শফিক নামের এক শিল্পী। নিজে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলে কী হবে? মায়ের তো কোনো আলাদা ধর্ম হয় না! ভক্তি, শিল্পীসত্তারও নেই কোনো আলাদা জাত। মনের ভাবই আসল রাজা। এই ভাবনাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে তৈরি করলেন দেবী কাঠামো।
জাঁকজমক পূর্ণভাবে আয়োজন করা হয় পুজোর। পুজোতে উপস্থিত থাকেন হিন্দু, মুসলিম, অবাঙালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন। নিষ্ঠা ভরে চলতে থাকে মাতৃ বন্দনা। এখানে এখনো অটুট পুজোর সাবেকিয়ানা। একচালাতেই বানানো হয় সপরিবার মা দুর্গার প্রতিমা। চার দিনের পুজোয় শুধু হিন্দুরাই নন, পুজোর কাজে হাত বাড়ান মুসলিম থেকে অবাঙালি ভাই-বোনেরাও।
এ পুজোর আরেকটি বিশেষত্ব হল, দশমীতে মাটির প্রতিমা বিসর্জিত হলেও কাঠামো বিসর্জন দেওয়া হয় না। কাঠামো রেখে দেওয়া হয় আগামী পুজোর জন্য। এখানকার মানুষের বিশ্বাস, কোন এক বছর নতুন কাঠামো তৈরি করায় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। সেই থেকেই প্রতিমা তৈরি হয় পুরনো কাঠামোতেই। এখনো মেনে চলা হয় সেই নিয়ম। রথযাত্রায় শুরু হয় কাঠামো মেরামতির কাজ। উল্টো রথে কাঠামোয় দেওয়া হয় মাটির প্রলেপ। দেবী অবয়ব তৈরির সূচনা হয়। পঞ্জিকা জানান দেয় মায়ের আগমনের বেশি দেরি আর নেই। কাজেই উল্টো গুনতি শুরু। হিংসা, জাতি, বিদ্বেষ মুদ্রার যদি একটি পিঠ হয়, ইসলামপুরের এই উদাহরণ হবে মুদ্রার অন্য পিঠ। যেখানে সততই দশভুজার আরাধনার উৎসবে মেতে ওঠে সকল মানুষ। তাই বইয়ের পাতার অক্ষরে নয়, এমন বাস্তব উদাহরণ হোক সর্বত্র, সকল মরশুমে।
চিত্র ঋণ – মানি টু মার্কেট, ডেইলি হান্ট
Discussion about this post