পুজো মানেই আনন্দ, পুজো মানেই রোজকার কর্মক্ষেত্র থেকে মুক্তি। কিন্তু বন্দি হয়ে কি নেওয়া যায় পুজোর স্বাদ? সেলুলার জেলের বন্দিদের কাছে ঠিক কতটা আনন্দের ছিল পুজো? এই জেলের প্রথম দুর্গা পুজো আয়োজিত হয়েছিল অনশন, আন্দোলন, মৃত্যু পেরিয়ে। পুজো উপলক্ষে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কমিটি। কিচেন কমিটি, স্টোরস্ কমিটি, নাটক কমিটি ইত্যাদি। খুব সামান্য কয়েকজন বাদে সকল কয়েদি মেতে গিয়েছিল পুজোর কাজে।
সময়টা ১৯৩৩ সাল। সেলুলার জেলের প্রথম দুর্গা পুজো বলে কথা! রাজবন্দিদের মধ্যে যাঁরা আঁকায় পারদর্শী তাঁরা রং-তুলি নিয়ে নেমে পড়লেন। মঞ্চ সাজাতে হবে যে! সেকারণে জেলের ভেতরেই এক রাজবন্দি বানিয়ে ফেললেন প্রতিমা। অন্যদিকে নাটকের মহড়া জমে উঠলো। বিছানার চাদর জুড়ে দিয়ে তৈরি হলো পর্দা। পুরুষ অভিনেতারা নারী চরিত্রে অভিনয় করার কায়দা তার মধ্যে রপ্ত করে ফেলেছেন। নাটক জমে ক্ষীর। তবে কিচেন কমিটির কাজ ছিল একটু কষ্টসাধ্য। পুজোর জন্য রসদ জমা করে ভালো-মন্দ খাবারের আয়োজন তো আর খুব সহজ নয়।
সেলুলার জেলের প্রথম এই পুজোর প্রতিমার মূলাধার ছিল ‘আলোর পথযাত্রী’। তবে পুজো নিয়ে গণ্ডগোল বাধে সপ্তমীর দিন। পুজো শুরুর সময়ে দেখা গেলো পুজোর কিছু সামগ্রী উধাও। সেই মুহূর্তে এক সাত্ত্বিক রাজবন্দি রেগে গিয়ে ঘোষণা করলেন ওই পুজোসামগ্রী অবিলম্বে খুঁজে না পাওয়া গেলে তিনি অনশন ধর্মঘটে বসবেন। এসব কান্ড হতে হতেই জেলের এক খোলা প্রান্তে খুঁজে পাওয়া যায় ওই সামগ্রী। পুজোয় পরপর তিনদিন তিনটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাটকের বিষয় বস্তু ছিল – কয়েদিদের জীবন, অনশন ধর্মঘট, আর শ্রমিকদের ওপর মালিকের অত্যাচার। ইংরেজ অফিসাররা পর্যন্ত ভীষণ উপভোগ করেছিলেন নাটকগুলি।
দিনের বেলাও অনুষ্ঠানের কমতি ছিল না। বার্মিজ নাচ ও বাজনা, ড্যাগারের খেলা, বিভিন্ন ধরনের ক্যারিকেচার, নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা কিছুই বাদ যায়নি। তবে জেলের ভিতরে কিবা দিন কিবা রাত! কিচেন কমিটি দায়িত্ব নিয়ে পোলাও, জিলাপি, সন্দেশ ইত্যাদি দিয়ে মিষ্টি আমেজ এনেছিল ঠিকই, তবে বিসর্জনের পর সবটাই যেন কেমন তেতো। পুজোর সব আলো নিভে গেলে কয়েদিদের জীবন আবার আগের মতই চলেছিল। শূন্য সেলে এক একজনের দিনযাপন।
Discussion about this post