জলপাইগুড়ির সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চ উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা এবং ইতিহাসের এক টুকরো। এই চার্চটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৮৬৮ সালে ইউরোপীয় চা বণিকরা জলপাইগুড়িতে এই গির্জাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চুন ও সুড়কি দিয়ে নির্মিত এই চার্চটি তাদের ধর্মীয় আস্থা ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছিল। চা বাগানের কাজে আসা ইউরোপীয়রা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য এই গির্জাটি তৈরি করেছিলেন।
বলা হয়, উত্তরবঙ্গের সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চ সবচেয়ে পুরনো। এই চার্চের ভিতরের কাঠামো ও ইউ আকৃতির আর্চগুলি পুরনো শাল কাঠের তৈরি৷ বেলজিয়াম কাঁচের তৈরি জানালা আজও অক্ষত রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, চার্চের মাথায় থাকা ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা ঘণ্টায় আজও মরচে ধরেনি৷ আজও সেটি সময়ের জানান দেয়৷
এই চার্চ চত্ত্বরে থাকা সেমেট্রিতে বহু ইংরেজ চা বণিকের সমাধি রয়েছে যা আজ জঙ্গলে ভরে গিয়েছে৷ বেশ কয়েকটির ফলকও ভেঙে গিয়েছে৷ শ্যাওলা জমে মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি সমাধি৷ ১৮৭৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চা বণিক ওয়াল্টার আলেকজান্ডার জন থমসনের স্ত্রী শার্লি থমসন মারা যান৷ তাঁর সমাধি এখানেই রয়েছে৷ এই গির্জা প্রতিষ্ঠার পিছনে তিনি অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন৷ অপর এক চা বণিক তথা ক্যাপ্টেন জন গ্র্যান্টের ২১ বছরের ছেলে জেমসের কলেরায় মৃত্যু হয়েছিল৷ তাঁর সমাধিও আছে এই চার্চের সেমেট্রিতে৷
এই চার্চটি জলপাইগুড়ির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। চা বাগানের যুগের ইতিহাস, ইউরোপীয়দের আগমন এবং তাদের জীবনযাত্রা – এই সবকিছুরই ছাপ এই চার্চে দেখা যায়। প্রতি বছর হেরিটেজ স্বীকৃতির আশায় থাকেন এই চার্চের সদস্যরা। সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জলস চার্চের সম্পাদক সুহৃদ মণ্ডল বলেন, “১৫৫ বছরের এই চার্চে আজ সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে৷ ঐতিহাসিক বহু সমাধি মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে৷ এগুলি উদ্ধার করে রক্ষণাবেক্ষণ করলে বহু ইতিহাস জানা যাবে৷ কিন্তু, কর্তৃপক্ষের আর্থিক সামর্থ নেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য৷ হেরিটেজ স্বীকৃতি না মেলা পর্যন্ত, প্রয়োজন হলেও চার্চের সংস্কারে হাত দেওয়া যাচ্ছে না৷”
Discussion about this post