স্বাধীনতার বিপ্লব এবং বিপ্লবীদের অন্যতম ঘাঁটি মেদিনীপুর। একসময়ে বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে ছিল সারা মেদিনীপুর জুড়ে। সেই বিপ্লবেরই পুড়ে যাওয়া ছাই সাক্ষী রয়ে গেছে আগুনের উত্তাপ কত তীব্র ছিল তার। সময়ে অসময়ে এই উত্তাপেই জ্বলেছে কত কত অত্যাচারী ইংরেজদের দেহ। সেইরকমই অত্যাচারী ইংরেজের মরণের সাক্ষী হয়ে আছে মেদিনীপুরের সেন্ট জনস্ চার্চ।
মেদিনীপুর শহর জুড়ে স্থানে স্থানে বহু চার্চ গির্জার অবস্থান। এই চার্চ গুলিই আবার মনে করিয়ে দেয় মানুষকে সেই স্বাধীনতা বিপ্লবের সেই অগ্নিযুগের সময়কালকে। এই চার্চের কবরিস্থানে রয়েছে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময়ের কুখ্যাত ডিএম জেমস পেডি। মেদিনীপুর শহর জুড়ে দাপিয়ে বেরিয়েছেন তিনি সেই সময়ে। তার অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন যত বাড়তে থাকে দমতে থাকে সত্যাগ্রহ বিপ্লবের আগুন। পেডির অত্যাচার যখন চরম সীমায় সেই সময় দূত হয়ে আসেন বিপ্লবী জ্যোতি জীবন ঘোষ এবং বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে একটি অধীবেশন চলছিল। সেই সময়ে অধীবেশনে ঢুকে অনেক কাছের থেকে দুই বিপ্লবী গুলি চালান জেমস পেডির ওপর। নিহত হন অত্যাচারী ডিএম পেডি। এই হত্যার দাগ এখনও অবধি সংরক্ষিত রয়েছে স্কুলে।
এই চার্চ দীর্ঘ শত বছরের ইংরেজ শাসনের জলজ্যান্ত সাক্ষী। ২৫০ বছরের পুরনো প্রায় এক একটি কবর। অসংখ্য ব্রিটিশদের কবর রয়েছে চার্চ ইয়ার্ডে। প্রত্যেক কবরে নিদর্শন ব্রিটিশ আমলের। ইংরেজ আমলে তৈরি চার্চটি আদল ব্রিটিশ চার্চেই মতোই। মেদিনীপুরের অন্যতম নিদর্শন এটি। সময় যেন থেমে গেছে চার্চের ভেতরে। ইংরেজদের বসার চেয়ার, বাইবেল পড়ার স্ট্যান্ড এখনও সেই আমলেরই। অতি প্রাচীন একটি পরীর দেখা মিলবে ভেতরেই। দেখে ভয় লাগলেও লাগতেই পারে। কিন্তু এর অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে দস্যুদের কার্যকলাপে। চার্চের মাথায় রয়েছে একটি হাওয়া মোরগ।
চার্চের পাশ দিয়ে যেতে গেলে অনেকেরই গা ছমছম করে। এখনও যেন সেই ইংরেজ শাসনের ধ্বনি মনে মনে বাজে। এই চার্চ সাক্ষী রয়েছে কত ইতিহাসের কত ঐতিহ্যের। আমাদের ইতিহাসের এই সংরক্ষণ গুলোই যেন কথা বলে আজও ফেলে আসা দিন গুলোর। বয়েস বেড়েছে ইমারতের। এখনও নিজ দম্ভে টিকে রয়েছে তবু। আরও হাজারও বছর এইরকমই দাঁড়িয়ে থাকবে এই চার্চ কত খারাপ ভালো দিনের নীরব দর্শকের হয়ে।
চিত্র ঋণ – বিশ্বরূপ গাঙ্গুলী
Discussion about this post