একজন রহস্যময় বৃদ্ধ। বয়স ষাটের উপরে তো হবেই। রাস্তায় হঠাৎ করেই আপনার চোখে পড়তে পারে তাঁকে। চালাচ্ছেন এক অদ্ভুতদর্শন সাইকেল। যার সামনের চাকা বেশ ছোট, আর পিছনের চাকাটি তুলনামূলকভাবে বড়। এমন অদ্ভুত সাইকেল দেখে আপনার মনে কৌতূহল জাগতে বাধ্য। কে এই বৃদ্ধ? কোথা থেকে এসেছেন তিনি? এমন সাইকেল তাঁর হাতে এল কীভাবে? বৃদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে যেন সাইকেলটিও কোনো এক অজানা গল্প বহন করছে, যা জানতে আপনাকে থামতেই হবে। আর আপনার চোখে পড়বে বৃদ্ধের উজ্জ্বল দুটি চোখ।
বৃদ্ধের নাম প্রশান্ত রায়। তাঁর বাড়ি ইছাপুরের দুই নম্বর পুলিশ কোয়ার্টারের কাছে। পেশায় তিনি একটি কারখানায় লোহা কাটার কাজ করেন। তবে তাঁর নেশা ভিন্ন। যন্ত্রপাতির সঙ্গে এক্সপেরিমেন্ট করা তাঁর সবচেয়ে বড় শখ। এই শখেরই ফসল সেই অদ্ভুত সাইকেল। লোহা কাটতে কাটতে তাঁর দুই হাতে কড়া। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, এবং স্ত্রী। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এখনও সারা সপ্তাহ ধরে কাজ করে সংসার তিনিই চালান। কিন্তু ছুটির দিনগুলোতে তাঁকে দেখা যাবে পার্কস্ট্রিটের অকশনে। পুরোনো জিনিস কিনে তিনি ওই সাইকেলে চড়ে ফিরবেন ইছাপুর।
১৯৮৬ সাল থেকে তাঁর এই যন্ত্রপাতি নিয়ে শখের শুরু। বানিয়েছেন বহুকিছু। রাস্তাঘাটে মানুষ তাঁকে দেখে অবাক হয়ে এসে কথা বলে যায়, ছবি তুলে নিয়ে যায়। শুধু সাইকেলই নয়, প্রশান্ত বাবুর হাতে জাদুর মতো বদলে যায় আরও অনেক কিছু। ল্যান্ডরোভার, ভেসপা কিংবা এম-এইট্টি প্রভৃতি গাড়ির উপর তাঁর এক্সপেরিমেন্ট রয়েছে। এমনকি বাড়ির ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন খারাপ হলেও সেগুলো তিনিই সারিয়ে নেন।
ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সংসারে বড় হয়েছেন প্রশান্ত বাবু। প্রথাগত পড়াশোনা মাত্র ৮ শ্রেণি পর্যন্ত। তবে জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাঁকে দমাতে পারেনি। অল্প বয়স থেকেই কাজের জগতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। নির্মল হাসিমুখে নিজের শখের কথা বললেও, তার মধ্যে নেই লেশমাত্র অহংকার। এই দ্রুত বদলে যাওয়া পৃথিবীতে, বদলে যাওয়া জীবনযাপনের মধ্যে প্রশান্ত বাবুর মত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। অসময়ের পলাশের মত আরো প্রশান্ত বাবুরা ফুটে রয়েছেন ইতিউতি।
Discussion about this post