শীতকালের সন্ধ্যা! ভাবুন অফিস বা স্কুল-কলেজ ফিরতি পথে মনটা খাই খাই করছে। ঠিক তখনই হালকা খাবার হিসেবে সিঙাড়ার জুড়ি নেই। এ দেশে মাংসের সিঙাড়া, ফুলকপির সিঙাড়া, পনিরের সিঙাড়া, ক্ষীরের সিঙাড়া ইত্যাদি নানা রকমের বা নানা স্বাদের সিঙাড়ার চল থাকলেও আলুর পুর দেওয়া সিঙাড়াই সবচেয়ে জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, এই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরই সৌজন্যে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ও রয়েছে সিঙাড়ার নানা কাহন। আজ আমরা বরং জেনে নিই হাওড়া জেলার কিছু সিঙাড়া শৈলী নিয়ে।
মাকড়দহ মোড়ে বিখ্যাত মিষ্টির দোকান অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার। এই দোকানের সিঙাড়ার নাম রয়েছে। লক্ষ্মী ঘিয়ে ভাজা সিঙাড়া। আকারে তুলনামূলক ছোট। সুস্বাদু পুর দেওয়া হয়। ঘিয়ে ভাজার জন্য স্বাদ অন্য রকম হয়। খেতে বেশ ভাল। দোকানের মালিক স্বপনবাবুর কথায়, তাঁদের দোকানের সিঙাড়া পছন্দ করতেন গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য। তবে তা ঘিয়ে ভাজা সিঙাড়া নয়। তাঁদের জন্য সরষের তেলে ভেজে দিতে হত সিঙাড়া। গায়কেরা হাওড়ার বসন্তপুরে ভারতমেলায় যেতেন। এত বছরেও সিঙাড়ার স্বাদ ও মান বজায় রেখেছে এই দোকান। এরপর আসা যাক অজিত দাসের দোকানের সিঙাড়া। অজিতবাবু জানালেন, সিঙাড়া তাঁদের দোকানে পরের দিকে যোগ হয়েছে। আদি পর্বে চপ, ফুলুড়ি, বেগুনি মুড়িই ছিল প্রধান। অজিতবাবুর দোকানের সিঙাড়া কেমন? পাতলা ছাল। আকারে তুলনামূলক ছোট। অন্নপূর্ণার সিঙাড়ার মতোই। একটু মশলার আধিক্য আছে। খেতে ভাল, দাম ৬ টাকা।
বড়গাছিয়ারই আরেক মিষ্টির দোকান শ্রীহরি মিষ্টান্ন ভান্ডার। এঁদের সিঙাড়াও বেশ ভাল। মোটা ছালের সিঙাড়া, মাখা পুর। আগে সকাল-বিকেল দু’বেলাই ভাজা হত। মালিক রবিন লাঙল বললেন, এখন শুধু বিকেলে ভাজা হয়। সিঙাড়া ১০ টাকা দাম। বাঙালি সিঙাড়া আর হিন্দুস্তানি সিঙাড়ার বিষয়টি কী? শোনা অভিজ্ঞতা থেকে যেটুকু মনে হয়েছে, ছোট আকার, খাস্তা এবং চটকানো নয় প্রতিটি উপকরণ বোঝা যায় এমন পুরের সিঙাড়াই বাঙালি সিঙাড়া। পাতিহাল স্টেশনের এক মিষ্টির দোকানের সিঙাড়া। মা তারা মিষ্টান্ন ভান্ডারে। ছোট আকার কিন্তু পুরটা একেবারেই আলাদা। আলুর টুকরো, মশলা, মটর কড়াই দেওয়া। সকলেই সকলের সঙ্গে মিশেছে। কিন্তু নিজস্বতা বজায় রেখেছে। আলাদা করে প্রত্যেককে দেখা যায় এবং বোঝা যায়। ৬ টাকা দামের এই সিঙাড়ার সঙ্গে এতদিন ধরে শুনে আসা বাঙালি সিঙাড়ার অসাধারণ মিল।
শুধু নিরামিষ নয়, মাংসের পুর দেওয়া সিঙাড়াও রয়েছে। মাংসের সঙ্গে ক্যাপসিকামও ছিল। রানিহাটি মোড় থেকে কিছুটা ঢুকে আমতার রাস্তার দিকে পেট্রোল পাম্পের কাছে দোকানটা। একটা চায়ের দোকানের পাশে। সে দোকানের চায়েরও নাকি বেশ সুনাম। এভাবেই কাল ও সীমানার ক্ষেত্র ছাড়িয়ে সিঙাড়া কাহন তো চলবেই।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – যথা ইচ্ছা তথা যা
Discussion about this post