সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হচ্ছে ভ্যালেনটাইন সপ্তাহ। আজ সেই সপ্তাহের সপ্তম দিন। আজকের দিনটি আলিঙ্গনের দিন বলে পরিচিত। আপাতভাবে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন মানুষের জন্যই এই দিন বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সত্যিই কী তাই? সেই যে কবে কয়েকজন মেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল গাছের গুঁড়ি, গাছকে ভালোবাসার জন্য, গাছ কাটতে দেবে না বলে। সে আলিঙ্গনও তো ছিল প্রাণের সঙ্গে প্রাণের আলিঙ্গন, ভালোবাসার আলিঙ্গন। ঠিক যেভাবে চার বছর আগে এক আলিঙ্গনের ছবি পেয়েছিল পুরস্কার! আজ সেই আলিঙ্গন উদযাপনেরও দিন।
পূর্ব রাশিয়ার জঙ্গল। যা বিশ্বের অন্যতম গভীর এবং নাতিশীতোষ্ণ রেইন ফরেস্ট বলে পরিচিত। এই জঙ্গলেই আছে অসংখ্য বিলুপ্ত প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি সহ রয়েছে ক্রমশ কমতে থাকা সাইবেরিয়ান বাঘের প্রজাতি। যারা পরিচিত ‘আমুর বাঘ’ নামে। প্রতিনিয়ত জলবায়ুর পরিবর্তন, খাদ্যের অভাব এবং সর্বোপরি চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যে আজ এই আমুর বাঘের সংখ্যা কমে গেছে ভীষণভাবে। আলিঙ্গনের ছবিটি সেই একটি আমুর বাঘেরই। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাঘটি দুই হাতে অবিকল মানুষেরই মত জড়িয়ে ধরে আছে একটি গাছকে।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম প্রতি বছরে তোলা বন্য প্রাণীর ফটোগ্রাফকে সেরার পুরষ্কার দিয়ে থাকে। এই পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে বিগত ৫৫ বছর ধরে। ফলে বলা বাহুল্য সম্মানটি ঐতিহ্যপূর্ণ। আমুর বাঘের ওই ছবি তোলার জন্য ২০২০ সালে এই পুরষ্কার লাভ করেন রাশিয়ান ফটোগ্রাফার সের্গেই গর্শকভ। সেই অতি অন্তরঙ্গ মুহূর্ত এবং বিশ্বের অন্যতম বিরল প্রাণীর ছবি হিসেবে সেরার পুরষ্কার পেয়েছিলেন তিনি। ল্যান্ড অফ লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কের একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল বাঘটি। এই ছবি তুলতে সের্গেইকে ক্যামেরা নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করতে হয়েছিল টানা দশ মাস।
গাছের গায়ে ঘষা দিয়ে এবং প্রস্রাব করে এক বাঘ অন্য বাঘকে তার নিজের বিচরণ ক্ষেত্রের সীমানা সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। সীমানা পেরোলেই লড়াই অবশ্যম্ভাবী। সম্ভবত সেই সতর্ক কত্রার মুহূর্তের বিরল ছবিটিই তুলে ফেলেছেন সের্গেই গর্শকভ। অথবা, কে বলতে পারে গাছের সঙ্গে হারিয়ে যেতে চলা এই পশুর প্রেম আছে কিনা? হাতে আঁকা তেলরঙের ছবির মতই সের্গেইয়ের ফটোগ্রাফে প্রকৃতি আর প্রাণী গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ। আলিঙ্গন দিবসে শুধু নারী-পুরুষের প্রেমের দিকে না ছুটে এই ছবিই হয়ে উঠুক ভালবাসার ভাষা!
Discussion about this post