উলুবেড়িয়ার শাটল ককের খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে। ভারতের বহু নামী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় শাটল কক ব্যবহার করেছেন। উলুবেড়িয়া থানার যদুরবেড়িয়া, বাণীবন এলাকায় তৈরি হওয়া শাটল কক অন্যতম কুটির শিল্প হিসাবে ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে। এবার ভারতীয় ডাকবিভাগ উলুবেড়িয়ার শাটল ককের খ্যাতি আরও বৃদ্ধি করতে নিল নয়া উদ্যোগ। এই শাটল ককের পার্মানেন্ট পিক্টোরিয়াল ক্যান্সেলেশনের উদ্বোধন হল।
প্রসঙ্গত, একসময় পালকের অভাবে উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শাটল কক শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছিল। কর্মহীন হয়ে পড়ছিল আশেপাশের এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। শতাধিক বছরের পুরনো শাটল কক শিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল আগেই। এই শিল্পের শুরুটা জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। ইংরেজ সেপাইদের ব্যাডমিন্টন খেলা দেখেই তাদের শাটল ককের জোগান দিতে শুরু করেন জ্ঞান বসু। সমস্তটাই নিজের মাথা খাটিয়ে। হাঁসের পালক, বোতলের ছিপি, আঠার সাহায্যে আটকে তৈরি হত তখনকার কক। সেই শুরু, এরপর থেকে শাটল কক বলতেই, নাম আসত উলুবেড়িয়ার। সময়ের সাথে দেশি বাজারের দখল নিয়েছে বিদেশি কক। এ অঞ্চলে এই হস্ত শিল্পই রুটিরুজি ছিল প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের।
সেই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, প্রকাশ পাড়ুকন যখন খ্যাতির মধ্য গগনে। তখন পাড়ুকন স্পোর্টসের জন্য শাটল কক যেত একমাত্র উলুবেড়িয়া অঞ্চল থেকেই। দেখতে দেখতে একের পর এক কারখানা গড়ে উঠেছিল বাণীবন, যদুরবেড়িয়া, বাণীতবলা এলাকায়। বছর কুড়ি আগেও অন্তত ২৫০টি কারখানা ছিল এই চত্ত্বরে। সেখানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। আজ কারখানার সংখ্যা কমতে কমতে ১০-১৫-তে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এবার হয়তো সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবগুলি ব্যাডমিন্টনের চর্চায় উৎসাহ দেবে। আর সেই সঙ্গে বাড়বে শাটল ককের চাহিদাও।
বর্তমানে মুঠোফোনে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠালেও নিজেদের হাতে লেখা শুভেচ্ছা বার্তা অন্যরকম অনুভূতি দেয়। আর এবার থেকে যদুরবেড়িয়া পোস্ট অফিস থেকে চিঠিপত্র আদান প্রদানের সময় প্রতিটিতে শাটল ককের পার্মানেন্ট পিক্টোরিয়াল ক্যান্সেলেশনের ছাপ মারা হবে। ফলে আশার আলো দেখছেন কক শিল্পের সাথে যুক্ত কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ। এর ফলে উলুবেড়িয়ার ককশিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়বে বলেই মত তাদের। ইতিমধ্যে জিআই পেটেন্টের জন্য আবেদন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post