কলকাতা একটি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত, যা বর্তমানে বিজ্ঞানীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (GSI) মতে, শহরটি ইন্ডিয়ান ও টিবেটান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে, যা ক্রমাগত নড়াচড়া করছে। প্রতিবছর ভারতীয় প্লেট প্রায় ৫ সেন্টিমিটার উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে এবং এর ফলে প্রচণ্ড শক্তি জমা হচ্ছে ভূগর্ভে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই জমে থাকা শক্তি যে কোনো সময় ভয়ংকর ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে, যা কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কলকাতায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেই শহরে দুটি ভূমিকম্প হয়। তবে ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এই ছোট কম্পনগুলো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। অতীতে ২০১৫ সালের নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প কলকাতাতেও প্রভাব ফেলেছিল, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়।
কলকাতার মাটির গঠন ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শহরের নিচে রয়েছে পলিমাটি, যা ভূমিকম্পের সময় তরল হয়ে যেতে পারে, ফলে দালানকোঠা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তদুপরি, ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ওঠানামা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ ভূমিকম্পের প্রভাবকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, তবে কলকাতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, যার জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও বাড়ছে, বিশেষ করে যেহেতু অনেক নির্মাণকাজে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আধুনিক নির্মাণপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার ও নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়ানো যায়। কলকাতার মতো ভূমিকম্প-প্রবণ শহরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হতে পারে।
Discussion about this post