লকডাউনের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিপদে রোজকার খেটে খাওয়া মানুষগুলি। এদের মধ্যে যেমন বেশ কিছু শ্রমিকও রয়েছেন, তেমনই নিষিদ্ধ পল্লীর মানুষগুলির সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। তবে ইদানিং হতদরিদ্র শ্রমিকদের জন্য সমাজের বেশ বড় একাংশ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। সেখানে যেন কিছুটা ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন নিষিদ্ধ পল্লীর যৌনকর্মী মহিলারা। পাতি বাংলায় রোজ শরীর বেচেই সংসার চলে তাদের। কিন্তু করোনার সংক্রমণ এড়াতে চালু হয়েছে সামাজিক দূরত্ব। তাই বন্ধ যৌনকর্মীদের রোজকারের পথও। ফলে তাদের দৈনিক জীবনযাপনের অবনতি ঘটছে ক্রমাগত। এই অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটাতেই শান্তিপুরের নিষিদ্ধপল্লীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন মোহর দে বিশ্বাস।
শান্তিপুরের সি আর দাস রোডের নিষিদ্ধপল্লীতে প্রায় ২৯৭ জন যৌনকর্মীর থাকেন। করোনার জন্য সাময়িক কর্মবিরতিতে তাদের মধ্যে অন্ততঃ ১৩০-১৩৫ জন মহিলার অবস্থা খুবই শোচনীয়ই। এই অবস্থায় স্থানীয় থানার সাহায্যে তাদের পাশে থাকতে এগিয়ে এসেছেন শান্তিপুরেরই বাসিন্দা মোহর দেবী। নিষিদ্ধ পল্লীর মানুষদের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, নুনের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সহ স্যানিটারি ন্যাপকিনও বিলি করা হচ্ছে। এই উদ্যোগটি চলছে গত চার দিন ধরেই। এই কাজে শান্তিপুরের স্থানীয় কিছু বাসিন্দাও মোহর দেবীকে সাহায্য করে চলেছেন। প্রসঙ্গতঃ শান্তিপুরের কাছাকাছি বানকে অবস্থিত একটি আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দাদের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তাঁরা।
নিষিদ্ধপল্লীর মানুষদের সাধারণতঃ আমরা প্রায় এড়িয়েই চলতে ভালবাসি। তাদের নিয়ে বহু ভুল ও অশ্লীল ধারণাও পোষণ করে আমাদের তথাকথিত ভদ্র সমাজ। কিন্তু এসবের মধ্যেই আমরা মাঝেমধ্যে ভুলে যাই তারাও আমাদের মতোই কিছু সাধারণ মানুষ। তাদেরও খিদে-তেষ্টা রয়েছে। বিপদে পড়ে সাহায্যের জন্য কাতর হন তারাও। ঠিক তখনই মোহর দেবীর মত কিছু মানুষ পথে নামেন। সামাজিক ট্যাবু চুরমার করে আমাদের শিখিয়ে যান মনুষ্যত্বের পাঠ। বুঝিয়ে যান ভালবাসার সংজ্ঞা। কারণ একমাত্র মানুষই মানুষের বিপদে পাশে থেকে করোনার মত একটা গোটা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে পারে।
Discussion about this post