ভারত ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশ। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ, প্রায় সব ধর্মের, সব শ্রেণীর মানুষের পারস্পারিক পীঠস্থান এ দেশ। এ দেশে রাম যেমন ঈদের চাঁদ দেখে খুশি হয়, তেমনই রহিমও দীপাবলির আলোতে মাতিয়ে রাখে চারিদিক। তবে সেই সুদূর অতীত থেকে এও দেখা গিয়েছে, একদল একদল ক্ষমতালোভী মানুষের জন্য ধর্ম হয়ে উঠেছিল তুরুপের তাস। ধর্মকে বাজি রেখেই যুদ্ধজয়ের ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন তাঁরা৷ তাঁদের মতে একমাত্র যে ধর্মে তাঁরা দীক্ষিত সেই ধর্মই হল শ্রেষ্ঠ। আর এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার উদ্দ্যেশ্যে বাকি ধর্মকে ছোট করতেও পিছপা হননি তাঁরা।
অতীতে নজর ফেরালে এও দেখা যাবে, ধর্ম নিয়ে শক্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কিন্তু সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন ধর্মের শাসকই। হিন্দু শাসকের ক্ষমতা দখলের লোভে যেমন ধ্বংস হয়েছিল বহু বৌদ্ধ-বিহার, ঠিক তেমনই মুসলিম শাসকগোষ্ঠীও হিন্দু মন্দির ভেঙ্গে বানিয়েছিলেন মসজিদ-দরগা। ভারতের মাটিতে এই নিদর্শন প্রচুরই বলা চলে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মের এই কূটনৈতিক চালে আজ জর্জরিত সাধারণ মানুষও। এ অবস্থায় ঠিক কি করনীয়? উত্তরটা খুবই সহজ, সর্ব ধর্ম সমন্বয়। যেখানে সব ধর্মের মানুষই নিজেদের ধর্ম ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতায় মেতে উঠতে পারেন।
হাস্যরসের সম্রাট শিবরাম চক্রবর্তী একবার বলেছিলেন, “মন্দির-মসজিদ-গির্জা যাই বানানো হোক না কেন‚ সেখানে শুধু এক ধর্মের লোকেরাই আসবে। সুতরাং পাশাপাশি মন্দির-মসজিদ-গির্জা গড়লে একদিন হয়ত মারামারি লাঠালাঠিও বেধে যেতে পারে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই পায়খানাই বানিয়েছি। সবাই আসছে এখানে। আসবে চিরদিন। হিন্দু, মুসলমান, জৈন, পার্শী, খেরেস্তান। কেউ বাকি থাকবে না। সর্বধর্ম-সমন্বয় এইখানেই।” বিষয়টি যে তিনি মজা করেই বলেছিলেন সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কি সহজ ভাষায় তিনি এক জটিল বিষয়কে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ‘পায়খানা’ বা শৌচালয় শব্দটি এখানে প্রতীকী হিসাবেই ব্যবহার করেছিলেন তিনি। আসলে তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের মাটিতে মন্দির বা মসজিদ নামক কোনও একটি ধর্মকেই স্বীকৃতি দেওয়া কোনও প্রতিষ্ঠান না খুলে বরং এমন কিছু হোক যাতে সব ধর্মের সব ধরনের মানুষ নির্দ্বিধায় সেখানে প্রবেশ করার সম্মতি পাবে। যেখানে ধর্মকে অজুহাত করে থাকবে না কোনও অসন্তোষ। ধর্মের নামে লাগবে না কোনও দাঙ্গাও। ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ সেখানে রাখতে পারবে নিজেদের চিন্তাধারার চিহ্ন। পাশে দাঁড়াবে একে অপরের।
ঠিক তেমনই বর্তমান পরিস্থিতিতেও কি এরকম কিছুরই অভাব আমরা বোধ করছি না? ঠিক এরকম একটি প্রতিষ্ঠানই কি আজকের সমাজতন্ত্রকে সুষ্ঠ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে না? এরকম কিছু কি দেশে হওয়াটা খুবই অসম্ভব বিষয়? নাকি ক্ষমতালোভী কিছু মানুষের স্বার্থেই ধর্মকে আজও ব্যবহার করা চলবে? এক সুস্থ সমাজ গড়তে ঠিক কোন বিষয়টা প্রয়োজন এই মূহুর্তে? ভাবুন, ভাবুন, অন্ততঃ ভাবা প্র্যাকটিস করুন। আসল ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে তবেই তো জগৎ সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আমাদের এ দেশ, ভারত।
Discussion about this post