বোলপুর স্টেশনে নামা মাত্রই কুঁজো অথবা জালা নিয়ে অপেক্ষায় মহিলারা। ঠান্ডা বাতাসা ভেজানো জল। জল খেয়ে উঠলেন রিক্সায়। রিকশাচালক সঙ্গীতে পারদর্শী, বাঁশি থেকে বিভিন্ন চামড়ার যন্ত্র বাজানোয় বেজায় দক্ষ। গল্প শুনতে শুনতে, বিশ্বভারতী ছাড়িয়ে চলেছেন লাল মাটির পথ ধরে, খোয়াই। লাল মাটির ছায়া ঘেরা রাস্তা, দু’পাশে অগুনতি গাছ-পাখিরা আপনাকে আপ্যায়ন করছে হাওয়ায়, সুরে। খোয়াই নামলেন। ভূগর্ভের জলে ভেসে চলেছে খোয়াই নদী। হাজারে হাজারে সোনাঝুরি গাছের ছায়ায়, বাউলদের দেহতত্ত্বের গানে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন বারবার।
এমন শান্তিনিকেতনের সন্ধানেই মানুষ বারংবার, আসেন বোলপুরে। তবে স্থানীয়রা বলছেন টুরিস্ট ক্রমশঃ কমছে। লাল মাটি প্রায় উধাও, পিচ রাস্তায গলগল করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। গাছ বড্ড কম। শান্তিনিকেতন এখন কোলকাতার মিনি সংস্করণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্রমশঃ অচলায়তন হয়ে উঠছে, তা পাঁচিলের বহর দেখেই বোঝা যায়।মানুষ তাই শান্তি খুঁজতে শান্তিনিকেতন ছেড়ে প্রান্তিকের দিকেই যাওয়া পছন্দ করেন। কিন্তু, সে পথেও যে বেজায় খরা। সোনাঝুরির রাস্তা ধরে ৩০০ – ৭০০ টি গাছ খুন হয়েছে বলে অভিযোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে, বোলপুর অঞ্চলে বৃষ্টি আগের মতন হয় না। ফলতঃ কৃষিকাজে জলের জোগান বাড়াতেই নাকি এই পরিকল্পনা। ক্যানেলের জলের অনেকাংশই মাটি শুষে নেয়, এতে গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেলে উন্নতি ঘটলেও, গ্রামে গ্রামে জলের জোগান কমে যায়। তাই ক্যানেলের জল বন্ধ করে, গোটা ক্যানেলটি শান বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাছের মূল ভবিষ্যতে যাতে ক্যানেলের দেওয়াল ভাঙতে না পারে, তাই অজস্র গাছ কেটে নামানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। ভীষণই দৃষ্টিকটু অবস্থায় এই মুহূর্তের সোনাঝুরির পথ। সূত্রের খবরে, এই এলাকা দৃষ্টিনন্দন করতে আগামী দিনে রাস্তার ধারে বানানো হবে পার্ক হবে।
“প্রকৃতির পরিকল্পনাকে মন থেকে মুছে ফেলে পরিকল্পিত পার্ক দেখতে পর্যটকরা কি আদৌ আর বোলপুর আসবেন?” দুশ্চিন্তায় প্রত্যেকটি বোলপুরবাসী, যাদের জীবিকা মূলতঃ ট্যুরিস্টদের ওপরেই নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন
ঈশিতা দে (A Story Teller, On Non – Human Life Style)
সার্বিক মুখার্জী (A Song Activist, On Climate Change)
Discussion about this post