“আমার দুর্গা আত্মরক্ষা শরীর পুড়বে মন না,
আমার দুর্গা নারী গর্ভের রক্ত মাংস কন্যা!”
আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিক এই কবিতার লাইনগুলোর মতোই এক যে আছে অগ্নিকন্যা! যে পিতৃতান্ত্রিক হুংকারের শব্দ চিরে তুলে ধরতে পারে সমাজের নগ্নরূপ! সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সততাই যার এক মাত্র হাতিয়ার! যার চোখে টলিউডের ট্রেন্ডসেটার হওয়ার স্বপ্ন বাঁচে! যিনি মুক্ত কণ্ঠে বলতে পারে, “বিশ্বের সমস্ত দায় কি শুধু শিল্পীদের?” কি জানতে ইচ্ছে করছে তো কে সেই স্বাধীনচেতা, মুক্তমনা, প্রতিবাদী কন্যা? উনি হলেন অভিনেত্রী রায়তী ভট্টাচার্য্য। তাঁর সঙ্গে বার্তালাপে ছিলাম আমরা। আর এই মুহূর্তে, সেই মুহূর্ত যাপনের সাক্ষী হতে চলেছেন আপনারাও।
অভিনয়ের সঙ্গে রিলেশনশিপ কীভাবে শুরু?
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে অ্যাক্টিংয়ের সাথে রিলেশনশিপটা সেই ছোট থেকেই। আমি ছোটবেলা খুব সিনেমা দেখতে ভালোবাসতাম, আর শৈশবে তো প্রায় সব বাচ্চাদেরই একটু আধটু হিরো হিরোইন হওয়ার ইচ্ছে থাকে। তাই আমিও ব্যাতিক্রম ছিলাম না। তবে প্রফেশনালি অ্যাক্টিং করার কথা সেভাবে কখনই ভাবিনি আগে। আমি যখন প্রথম থিয়েটার করতে চলেছি তখনও অ্যাক্টিংটা প্রফেশনালি করবো বলে ভাবিনি। হয়তো আর্ট ডিজাইনার হতে পারতাম, মেক-আপ আর্টিস্ট হতে পারতাম কিংবা পরিচালকও হতে পারতাম। কিন্তু জীবনের প্রথম নাটকটিতে অ্যাক্টিং করার পর আমি ঠিক করি যে অভিনয়টাই আমি প্রফেশনালি করতে চাই।
এই সময়ে দাড়িয়ে একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে প্রতিভাটাই কি যথেষ্ট?
অবশ্যই! একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে প্রতিভা তো থাকতেই হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বেয়ারিং ব্যাপারটা চলে আসে। আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রিতে এটা এখন খুব প্রচলিত একটা শব্দ। তবে আমি মনে করি যে আর্ট ফর্মে আমি কাজ কাজ করতে চলেছি, সেই আর্টটা আমার মধ্যে থাকা দরকার। অভিনয়টা যার ওপরে নির্ভর করে, সেই প্রতিভাটাই যদি আমার না থাকে, আমার আর যাই থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত দর্শক আমাকে নেবে না।
টেকনিক্যালি অভিনয় করে বেরিয়ে যাওয়া? নাকি চরিত্রের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে চরিত্র হয় ওঠা। কোনটি একজন অভিনেতা/অভিনেত্রীর অন্যতম বৈশষ্ট্য হওয়া উচিত?
এক্ষেত্রে আমি বলবো শুধু চরিত্র হয়ে ওঠাই নয়, আমরা শিল্পীরা মাঝে মধ্যে চরিত্রটাকে নিজের মধ্যে ধারণও করি। কাজেই কখনও আমি নিজেই চরিত্র হয়ে উঠি তো কখনো একটি চরিত্র আমার মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে। শুধু টেকনিক্যালি অভিনয় করে বেরিয়ে গেলে সেই অভিনয় প্রাণ থাকে না। তবে অনেক সময় পরিস্থিতির প্রয়োজনে আমাদের টেকনিক্যালি অভিনয় করে বেরিয়ে যেতে হয়। যেমন টেলিভিশনের ক্ষেত্রে বলি এমনও অনেক বাড় হয়েছে যে কোনো চরিত্রকে বুঝে ওঠার পর্যাপ্ত সময় আমি পাইনি, তার আগেই আমার সিন চলে এসেছে এবং আমার সামনে ক্যামেরা অন্ করে দেওয়া হয়েছে। তখন আমাকেও টেকনিক্যালি অভিনয় করে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। তবে আমার কাছে চরিত্রকে বুঝে অভিনয় করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী দিনে কোন কোন কাজ মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে?
আপাতত শুট হয়ে গিয়েছে ‘ছাদ’ বলে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি যেটি পরিচালনা করেছেন ইন্দ্রানী চক্রবর্তী এবং মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পাওলি দাম! আমাকে ওনার বোনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। পরবর্তী ছবি অতনু ঘোষ পরিচালিত ‘শেষের পাতা’র শুট সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হতে চলেছে। সেখানে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আমি বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করছি।
জীবন যুদ্ধে কাছের মানুষদের কতটা পাশে পেয়েছেন?
জীবনের তো অনেক গুলো দিক থাকে, তো ব্যক্তিগত দিক থেকে দেখতে গেলে আমার পরিবারের সকলকেই আমি আমার পাশে পেয়েছি। আমার মা বাবা ভাই ও স্বামী সকলকেই। তবে জীবনের যে আরও একটি দিক মানে আমার কর্ম জীবন, সেই ক্ষেত্রে আমাকে বাবা মা’র বিরুদ্ধে গিয়ে অনেকটা লড়াই, অনেকটা বিদ্রোহ করেই এগোতে হয়েছে। তবে এই দিক থেকেও আমার ভাই আর স্বামীকে ভীষণভাবে পাশে পেয়েছি আমি।
অভিনয় জগতের স্বর্ণযুগের এমন একটি নায়িকাকেন্দ্রিক চরিত্রের নাম বলুন যা আগামী দিনে রিমেক তৈরি হলে আপনি নিজে অভিনয় করতে ইচ্ছুক?
এক্ষেত্রে আমি বলবো আমি বড়াবড়ই ট্রেন্ড সেটার হতে চাই! আমি পুরনো কিছু করতে চাই না! বরং আমি এমন কিছু করতে চাই যা নিয়ে আমার পরবর্তী প্রজন্মকে এই একই প্রশ্ন করা হবে।
অভিনয় দুনিয়ার নানা প্রতিকূলতাকে কিভাবে সামলেছেন?
আমি মনে করি যে কোনো প্রতিকূলতাকেই আমি খুব সততার সাথে সামলে এসেছি এতদিন এবং আগামী দিনেও একই ভাবে সামলে চলব। আমি খুব অনেস্টলি ভাবার চেষ্টা করি যে একজন জেনুইন মানুষ এই পরিস্থিতিতে ঠিক কি করতে পারে এবং আমি সেটাই করি। সততা ছাড়া আমার কাছে আর কোনও হাতিয়ার নেই।
নিজের হেটার্সদের জন্য কি বার্তা দিতে চান?
আমার হেটার্সদের বলবো আমাকে আরও বেশি করে হেট করো, যার ফলে আমাকে যারা ভালোবাসে তারা আরও বেশি করে আমাকে ভালবাসতে পারবে সুতরাং আমাকে বেশি বেশি হেট করো। (হেসে)
একজন শিল্পী হিসেবে সমাজের প্রতি কি কি দায়বদ্ধতা রয়েছে?
একজন শিল্পী হিসেবে একটা ভালো শিল্প তৈরি করাই সমাজের প্রতি আমার একমাত্র দায়। এর থেকে বেশি কিছুকে আমার দায় বলে আমি মনে করি না। অনেকেই শিল্পীদের দিকে আঙুল তোলেন যে এটা করা উচিত ওটা করা উচিত নয়। আমি তাদের কাছে জানতে চাই যে একজন ছুতোরের কারিগরের কাছে যদি তার কাজটা ঠিক করে করার দায় থাকে বা একজন ডাক্তারের দায় থাকে শুধুমাত্র তার রোগীকে সুস্থ করা, তাহলে একজন শিল্পীর দায় শুধু মাত্র তার শিল্পটা ঠিক করে করার দায় থাকবে না কেন? বিশ্বের সব দায়ে কি শুধু শিল্পীদের? আমি মনে করি আমি একজন শিল্পী এবং শিল্প সৃষ্টিই আমার একমাত্র দায়। তবে হ্যাঁ আমার সমাজে যদি আমি এমন কোনো ঘটনা দেখি যা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয় এবং আমি যদি মনে করি সেটা চেঞ্জ হওয়া দরকার তাহলে সেই দায়টাও আমি আমার শিল্পের মধ্যে দিয়েই পালন করবো।
Discussion about this post