আজ বিজ্ঞান এগিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। মানুষ যেমন দিচ্ছে মহাকাশে পাড়ি। একদিকে রয়েছে মানব সভ্যতার এ সব সাফল্য। তার ঠিক পাশেই সহাবস্থান করছে মানব সভ্যতারকলঙ্ক। সেই কলঙ্কের অন্যতম হল কুসংস্কার। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথেই তথাকথিত ‘আধুনিক’ মানুষের মনে মিশে আছে কুসংস্কারও। কীভাবে আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে কুসংস্কার তা বোঝাতে তুলে ধরতে হবে এক ফেসবুক কমেন্টের স্ক্রিনশট।
এক ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে কিছু কথা লেখেন প্রীতম মুখোপাধ্যায় নামের এক ব্যক্তি। বক্তব্যে তিনি জানান, যিনি ঠিক করেছিলন তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে সারাজীবন পথ চলবেন। তবে এ সিদ্ধান্ত জানাতেই তাতে বাধ সাধলেন প্রতীক বাবুর পারিবারিক জ্যোতিষী। বাধ সাধার কারণ হিসাবে জ্যোতিষী জানান পাত্রী মঙ্গলিক ও রাক্ষসগণ। তিনি আরও জানান যে এই বিবাহ হলে নাকি হয় এক বছরের মধ্যে ডিভোর্স হবে কিংবা প্রতীকবাবু পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু প্রতীকবাবুও তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অনড়। তাই বিপদ এড়াতে তাকে নাকি পড়তেই হবে সাতচল্লিশ হাজারের হীরের আংটি। কিন্তু স্বাধীনচেতা মন সায় দেয়না এ কাজে। আবার মায়ের আদেশও অমান্য করেন কীভাবে? এই দুইয়ের টানাপোড়েন থেকে বেরোতে প্রতীকবাবু আঁটলেন এক ফন্দি।
বাজার থেকে কিনলেন এক নকল হীরের আংটি আর বাকি টাকাতে কিনলেন বই। আজ প্রতীকবাবু ও ওনার স্ত্রী সেই নকল হীরের জোরেই দীর্ঘ বহু বছর ধরে কাটাচ্ছেন তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন। বলা বাহুল্য, ৩৩ টি লাইক পড়েছে তার কমেন্টে (স্ক্রিন শট নেওয়ার আগে পর্যন্ত)। সেদিন যদি তিনি জ্যোতিষীর কথা শুনে বিবাহ না করতেন, তাহলে তার জীবন হতো অন্যরকম। আবার যদি সাতচল্লিশ হাজারী হীরের আংটি তিনি পরতেন তাহলে কি জীবনে বেশী সুখ পেতেন? হয়তো না। আসলে সুখ মানুষের মনে। আজও যুগ এগিয়ে গেলেও বহু ভালোবাসা পরিণতি পায়না এই কুসংস্কারের চাপে। এই চাপের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় পাত্র বা পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুণ ইত্যাদি। তার বদলে গুরুত্ব পায় তার হাতের তালুর রেখাগুলো আর তার জন্মের সাল তারিখ সময়। আদতে মানুষ সুখী কিংবা দুঃখী হয় তার নিজেরই নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর জন্য। তার বাস্তবিক উদাহরণ প্রতীক বাবুর জীবনের এই ঘটনাটাই।
Discussion about this post