ছবি প্রতীকী
বাঙালি মানেই উৎসব। উৎসবপ্রিয় বাঙালির গ্রীষ্মকালীন শ্রেষ্ঠ উৎসব রথ দ্বিতীয়া। কথিত আছে, দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনে প্রত্যাবর্তনকে স্মরণ করেই রথযাত্রার সূচনা। যে সকল ভক্ত তাঁর কাছে আসতে পারেন না, তাদের দর্শন দিতে প্রভু স্বয়ং মন্দিরের গর্ভগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ভক্তকে দর্শন দেন এই দিনে। মাহেশ, গুপ্তিপাড়ার প্রসিদ্ধ রথযাত্রার মতো চৈতন্যধাম নবদ্বীপেও মহাসমারোহে পালিত হয় জগন্নাথ দেবের এই উৎসব। নবদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী রথগুলির মধ্যে অন্যতম প্রায় তিন শতাব্দী প্রাচীন মণিপুর রাজবাড়ির রথ।
জানা যায়, মণিপুররাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহ ১৭৯৭ সালে নবদ্বীপে আসেন। তার কন্যা বিম্বাবতী মঞ্জরি মহাপ্রভু দর্শনের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। এরপর রাজা ভাগ্যচন্দ্রের মৃত্যুর পর কুমার চৌরজি সিংহ বোন বিম্বাবতী মঞ্জরীর ইচ্ছানুসারে নবদ্বীপে বসতি স্থাপন করেন। ১৮০৫ সালে বিম্বাবতী মঞ্জরীর হাত ধরেই মণিপুর রাজবাড়ির রথযাত্রার সূচনা হয়। মনিপুরের রথ যাত্রাপথে বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে থামে এবং সেই বাড়ির তরফে জগন্নাথকে আরতি করা হয় এবং ভোগ দেওয়া হয়। মণিপুরের রাজবাড়ির রথের এক অদ্ভুত নিয়ম আছে। একমাত্র মণিপুরের রথেই জগন্নাথদেব একলা আরোহী। থাকেন না তাঁর ভাই-বোন। তবে মণিপুরের রথে জগন্নাথদেব একা কেন? নবদ্বীপ তথা নদিয়ার অন্যতম প্রাচীন এই রথযাত্রা প্রসঙ্গে গবেষক প্রবীর ভট্টাচার্য জানান, “দ্বারকা থেকে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ একা এসেছিলেন। সেখানে তিনি রাধারানি-সহ অন্যান্য গোপিনীদের কৃপা করেন। আমাদের রথে সেই দর্শনটিই অনুসরণ করা হয়। তাই প্রতিদিন রাতে জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র পাঠ করা হয়।”
মাসির বাড়ির প্রথা মণিপুর রাজবাড়ির রথে নেই। ফলে, রাজবাড়ির চারটি মন্দির ঘুরে রথ পুনরায় রাজবাড়িতেই ফিরে আসে রথ। তবে উল্টোরথ পর্যন্ত প্রতি সন্ধ্যায় উৎসব হয়। মণিপুরী নাচের সঙ্গে জয়দেবের পদ গেয়ে জগন্নাথের সন্ধ্যারতি এই রথযাত্রার স্বতন্ত্র ঐতিহ্য। এছাড়াও রয়েছে নানান প্রাচীন রীতিনীতি। নবদ্বীপে অতি প্রাচীন রথযাত্রা যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছে। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বাঙালির আনন্দ-উচ্ছ্বাসের দিক থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। শুধু স্থানীয়রাই নন, প্রতিবছর রথযাত্রায় সামিল হতে সুদূর মণিপুর থেকেও আসেন বহু ভক্ত। সূদুর মণিপুরের প্রাচীন সংস্কৃতি আজ ও বয়ে চলেছে নবদ্বীপ মণিপুর রাজবাড়ি। বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’—কবির এই বার্তার যেন সঠিক মান রেখেছে এই রথযাত্রা।
Discussion about this post