রথ উৎসব নিয়ে বাঙালির আনন্দের কোনো সীমা নেই। পুরীর রথে যেমনি হয় জনসমাগম, তেমনি পরিচিত মাহেশের রথও। এ সমস্ত জায়গার কথা বলাই বাহুল্য। তবে রথের নানান গল্প ঘেঁটে উঠে এসেছে নদিয়ার হরিপুরের রথের কথা। এখানেও উৎসবে মেতে ওঠে আপামর জনসাধারণ। তবে আসল গল্প এ রথ নির্মাণের। একেবারে অন্যরকম গল্পের স্বাদ। নদিয়ার হরিপুর এলাকার জগন্নাথ ভক্তরা মিলে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন রথ উৎসব পালন করার। হরিপুর এলাকাটি শান্তিপুরের কাছাকাছি অবস্থিত। সেখানে রথ উৎসবের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একেবারেই ছিল না আর্থিক পরিকাঠামো। অর্থ জোগাড় প্রায় অসম্ভব। এমন অবস্থায় এগিয়ে আসেন শান্তিপুরের তাঁতিরা।
কথায় বলে, মানুষের মধ্যেই ভগবানের বাস। এ যেন ঠিক তাই। আর তাই পরিত্যক্ত তাঁতের কাঠ দিয়ে প্রথম নির্মাণ করা হয় হরিপুরের রথযাত্রার রথ। যদিও এটা বেশ কিছু বছর আগের কথা। উৎসবের সূচনা সম্পন্ন হয়েছিল সেবারের মত। তারপর থেকে দিনে দিনে ভক্ত সংখ্যা বেড়েছে। কাঠের রথের রূপ এসে পৌঁছেছে লোহার রথে। বিশিষ্ট শিল্পীরা যথাযথ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তৈরি করেছেন বর্তমানের লোহার রথটি।
এ উৎসবে জগন্নাথ দেব আসেন নবদ্বীপ থেকে। প্রতিবারের নিয়ম অনুযায়ী হরিপুর মাঝেরপাড়া রমা প্রসাদ মুখার্জির বাড়ি থেকে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। ব্রাহ্মণদের কোলে চেপে মনসাতলায় থাকা রথে চড়েন তিন ভাইবোন। এরপর কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সরণী সেধের পুকুর হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠ অবশেষে রথের রশির গতি কমে। অবশেষে ঘোষপাড়ায় বাবলা ভট্টাচার্যের বাড়িতে, জগন্নাথ দেব থাকেন সাত দিন। তারপর উল্টো রথে তার ফিরে যাওয়া। ৫৬ ভোগ ভোগ রন্ধন , সাত দিনের নতুন বেশভূষা এই সবকিছু যোগ হয় উৎসবে। কীর্ত্তন দল সহ জগন্নাথ দেবের রথে চড়া এক শান্তির দৃশ্য। ভক্তবৃন্দদের রথের রশি টানা নিয়ে গোটা গ্রাম মেতে থাকেন এই কদিন। মাঠ জুড়ে মেলা বসে। পাঁপড় ভাজা ছাড়া রথের মেলা জমে নাকি! রথের রূপ বদল হলেও আনন্দের চিত্র রয়ে গেছে একইরকম।
Discussion about this post