বাঙালির লেগেই রয়েছে বারো মাসে তেরো পার্বণ! এ আর নতুন কি! আর এরই মধ্যে অন্যতম রথযাত্রা। জগন্নাথ দেবের পুজো হল এ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। কথিত আছে এই দিন নাকি দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সাথে সুসজ্জিত রথে চেপে মাসীর বাড়ি যান জগন্নাথ। আর সাত দিন পর আবার নিজ মন্দিরে ফিরে আসেন। এই সাত দিনের সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় রথ উৎসব পালিত হয়। মাঝে সাঝে এই উৎসবের সঙ্গে যদি জুড়ে যায় মেলা তাহলে তো আর কথাই নেই৷
কলকাতা থেকে যশোর রোড ধরে বারাসাতের দিকে আসতে ডান দিকে পড়ে রথতলা। সামনে রয়েছে একটি খোলা মাঠ যা অন্যান্য দিন প্রধানত হয়ে ওঠে বাচ্চাদের খেলাধূলা, ফুটবল -ক্রিকেট ম্যাচ বা তাসের আসরের ডেরা। কিন্ত এই বিশেষ দিনে মাঠটিরই ভোল বদলে যায়। রথের মেলাকে কেন্দ্র করে এই জায়গাটির নাম হয়েছে রথতলা। উত্তর চব্বিশ পরগণার প্রাচীনতম রথের মেলার মধ্যে পড়ে এটি। কিন্তু নকশাল আন্দোলনের পর থেকে আর রথ টানা হয়না এখানে।এই মাঠে বিগত কয়েক বছর ধরে আসত রথ তবে এখন প্রথা মেনে এখান থেকে আর রথযাত্রা হয়না। কিন্তু নবীন প্রজন্মের রথ ছাড়া রথের মেলায় আপত্তি থাকায় তারা স্থানীয় জগবন্ধু আশ্রমের দারস্থ হয়। ঠিক হয় জগন্নাথের পূজারীরা যে রথ বের করবেন জগবন্ধু আশ্রম থেকে, সেই রথটিকেই নিয়ে আসা হবে রথতলায়। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জায়গার। সময়ের সাথে সাথে মাঠের জায়গাও হয়েছে ছোট। মেলা আয়োজক মুকুল চ্যাটার্জি থেকে জানা যায়, জোড়া শিব মন্দিরের সামনে রথ রাখার স্থান নির্বাচন হয়। জোড়া মন্দিরে রাখা রথই বিগত কয়েক বছর ধরে পুজিত হয়ে আসছে। আর এই রথকে কেন্দ্র করেই বসে সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক রথের মেলা।
সেকি জাঁকজমক, সেকি আলোক সজ্জা! কাপ প্লেট থেকে খাবার দাবার কি না নেই। পাপড় থেকে জিলাপি, বাদাম থেকে তেলে ভাজা সবই পাওয়া যায় এই মেলায়। সাথে থাকে নানান রকম নাগরদোলা আর রাইডস। কিন্তু এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল গাছ। এই সময় এখানে পাইকারী দামে হরেক রকম ফুল, ফল, পাতাবাহার গাছ বিক্রি হয়। আর সেই গাছ কিনতেই জড়ো হন বিভিন্ন প্রান্তের গাছপ্রেমীরা। কথিত আছে একসময় এই মেলায় উল্টোরথের দিন শেষ হত বৌ মেলা। ঐতিহাসিক সেই মেলায় পুরুষ প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় একসময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই মেলায় এসে পুজো দিয়ে গেছেন। কিন্তু হাল আমলে গাছ কেনা বেচাই এই মেলার মূল আকর্ষণ সাথে জিলাপি পাপড় তো আছেই।
যদিও বিগত বছর থেকে করোনার কারণে মেলা প্রায় স্তব্ধ৷ এই মেলা থেকেই প্রচুর গাছ বিক্রি হয় যা বৃক্ষরোপণে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি উৎসাহিত করে। কিন্তু বিগত বছরে এই মেলা না হওয়ায় এই প্রক্রিয়াও রয়েছে বন্ধ। আশা করা যায় এই করোনা পরিস্থিতি দ্রুত নিরাময় হবে। আমরা আবার ফিরে পাব আমাদের স্বাভাবিক জীবন। আবার শুরু হবে মেলা আর এই মেলার মাধ্যমেই ঘটবে মানুষ আর প্রকৃতির মেলবন্ধন। এটাই কাম্য।
Discussion about this post