সারা বছর এভাবে উৎসবে মেতে থাকতে বাঙালিই পারে! পর পর উৎসব চলতে চলতে এবার সময় রাসের। তবে রাস হলো মানুষের সাথে ভগবানের একাত্ম হওয়ার দিন। গোপিনীদের আবদার রাখতেই শ্রী কৃষ্ণ রাধা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন রাসের। রাস কথাটা এসেছে ‘রস’ থেকে। ভক্তির রস চারিদিকে ছড়িয়ে দিতেই এর সূচনা। দুজন, চারজন বা ষোলো জনের বৃত্তাকার নাচের ভঙ্গীই সাধারণত: রাস হিসেবে পরিচিত।
নবদ্বীপ, শান্তিপুরের রাসের সময়কালীন রাস উৎসব শুরু হয় নদিয়ার পায়রাডাঙ্গায়।পায়রাডাঙ্গা বাণীনগর প্রাঙ্গণে শ্রী চৈতন্য মানব কল্যাণ সেবাশ্রম। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় পাঁচদিন ব্যাপী রাস উৎসব। এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রী মাধবানন্দ দাস গোস্বামী। যিনি ছিলেন শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যদের মধ্যে একজন। ১৩৮২ সনে তিনি বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের পর তাঁর এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা। তিনি গত হবার পর তাঁর শিষ্যরাই চালনা করে চলেছে এই অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীদেরও যথেষ্ট অবদান আছে এ ঐতিহ্য বহন করে চলার পথে।
শ্রীমদভগবত পাঠ দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিন। তার পর একে একে চলতে থাকে হরিনাম সংকীর্তন। প্রভুর কথা জানতে কার না ভালো লাগে! তাকে কি আর এক জীবনে জানা যায়? তবু মানুষের বিশ্বাস, মন চাইলেই সব সম্ভব। ঈশ্বর মানুষ একাকার হবার জন্য চলতে থাকে কীর্তন। সেজে ওঠে মন্দির। রাধা মাধবের মূর্তিতে ফুটে ওঠে তাদের রাস লীলা। আলোর আরেক সাথী হয়ে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদ। বিকেল থেকে শুরু হয় মেলা। মেলা মাত্রই মানুষের মিলন স্থল। আর মানুষের মাঝেই ঈশ্বরের বাস। শেষ দিনে হয় নগরকীর্তন। আর মহাপ্রভুর মহাভোগ বিতরণের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এই উৎসবের।
Discussion about this post