শীতের মরসুমে দেখতে দেখতে চলে এলো ডিসেম্বরের শেষ। আর ডিসেম্বরের শেষদিক মানেই বড়দিনের আমেজ। আর সেই সময়ে সমস্ত চর্চা চার্চকে ঘিরে। বলা যায়, যীশুকে নিয়ে। তবে শুধু যীশুই নয় কিছু চার্চের কাহিনী আছে মাদার মেরিকে কেন্দ্র করে। তাঁকে ছাড়া যীশুকে ভাবা যায় না।
এমনই একটি ক্যাথলিক চার্চ অবস্থিত রানাঘাটে। ঠিক ৩৪ নং জাতীয় সড়কের ওপরে। এ চার্চ প্রতিষ্ঠা হয় মেক্সিকোর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। শোনা যায়, মেক্সিকোর এক পাহাড়ে এক আদিবাসী ছেলেকে মাদার মেরি দর্শন দেন। ছেলেটি এসে সেই কথা লোকালয়ে বললে, কেউ তা বিশ্বাস করতে চায়নি। পরের দিন পাহাড়ে গিয়ে এই কথা সে মাদারকে জানালে, মাদার তাকে আশীর্বাদস্বরূপ গোলাপ ফুলে ভরা একটা চাদর দেন। গোলাপ মেক্সিকোতে পাওয়া বিরল। তাই মানুষ যাতে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় তাই মাদারের এই পরিকল্পনা। আর সেই চাদর নিয়ে আদিবাসী ছেলেটি তার লোকালয়ে এসে দাঁড়ালে ওই চাদরে ফুটে ওঠে মাদার মেরির মুখ। আঞ্চলিক মানুষের সেই মাদারকে প্রথম দর্শন। এই ঘটনাটা ঘটে কোনো এক বছরের ১২ ডিসেম্বর। এদিনটিও ক্যাথলিক চার্চগুলোয় সাড়ম্বরে পালিত হয়।
রানাঘাট চার্চ নামে পরিচিত হলেও এই চার্চের প্রাচীন পুরোহিত এর নাম রাখেন ‘আওয়ার লেডি অফ গুয়াডালুপ’। লুইস গবেস্টি নামে এক ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রমে চার্চটি আজও অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে মাথা উঁচু করে আছে। সবটাই মাদার মেরি আর যীশুর আশীর্বাদ বলেই মনে করেন আঞ্চলিক বাসিন্দারা। মাদারের ওই রূপ পরিচিত গুয়াডালুপ নামে। মেক্সিকান এই গল্প যখন ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই বাংলায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো চার্চ। তারই মধ্যে কলকাতা থেকে একটু দূরেই অবস্থিত রানাঘাট বেগোপাড়া চার্চ। যেটাকে বলা হয় গির্জা মন্দির। প্রথম দিকে ইতালি থেকে আসা ফাদারদের দায়িত্বে থাকলেও, বর্তমানে এখানকার ফাদার একজন বাঙালি। গোটা বাঙালি পাড়া খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়ে এখন তা ক্রমশ খ্রিস্টান পাড়াই হয়ে উঠেছে।
বড়দিনের আগের রাতেই শুরু হয় প্রার্থনা। রাত ১১ঃ৩০ এ শুরু হয় গান,তারপর ঠিক বারোটায় পালন করা হয় যীশুর জন্মদিন। কেক কেটে, তা প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে, ২৫ ডিসেম্বর সবার জন্য খোলা থাকে চার্চের গেট। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চলতে থাকে উদযাপন।
Discussion about this post