শিরমাল একটি সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি রুটি। মূলত ভারতবর্ষ, বিশেষত উত্তর ভারত ও বাংলাদেশে এটি জনপ্রিয়। সাধারণত রমজান মাসে ইফতারির অন্যতম মুখরোচক উপাদান হিসেবে পরিবেশিত হয় শিরমাল। এটি পারসিক ও মুঘল প্রভাবের একটি খাবার, যা মিষ্টি রুটির মতো, জাফরান ও দুধের সুবাসে অনন্য স্বাদ পায়। ইফতারের সময় মানুষ এটিকে খেজুর, ফলমূল ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করে থাকেন।
বর্তমানে শিরমাল মূলত কলকাতার মুসলিম প্রধান এলাকায় পাওয়া যায়। জাকারিয়া স্ট্রিট, খিদিরপুর অঞ্চলে। রমজান মাসে শিরমালের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তবে সারা বছরই এই রুটি পাওয়া যায়। শিরমালের দাম সাধারণত ২০-৩০ টাকার মধ্যে হয়, তবে আকার ও উপকরণের ভিত্তিতে দাম পরিবর্তিত হয়। শিরমাল বানাতে ময়দার সঙ্গে ঘি, চিনি ও সামান্য লবণ মেশানো হয়। জাফরান মেশানো দুধ দিয়ে ময়দা মেখে, বেলে তন্দুরে বা ওভেনে বেক করলেই তৈরি এই সোনালী রঙের রুটি।

“শিরমাল” শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। “শির” মানে দুধ এবং “মাল” মানে মাখানো বা মেশানো। অর্থাৎ, এটি এমন একটি রুটি যা দুধ দিয়ে মাখানো হয়। শিরমাল ভারতবর্ষে মুঘলদের শাসনামলে পারসিক প্রভাবের মাধ্যমে আসে। মুঘলরা পারস্য থেকে তাদের সাথে এই মিষ্টি রুটির সংস্কৃতি নিয়ে আসে, যা ধীরে ধীরে বাংলার নবাবি দরবার ও অভিজাত মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যেও জনপ্রিয় হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎসব, বিশেষত ঈদ, বিয়ে বা বিশেষ পারিবারিক অনুষ্ঠানে খাওয়া হয়।
কথিত আছে আওধের নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের দরবারে এক বিখ্যাত বাবুর্চি নাকি শিরমাল পরিবেশন করেছিলেন। নবাবের এই রুটি এতটাই প্রিয় হয়ে ওঠে, যে তিনি এটি প্রাসাদের প্রতিদিনের মেনুতে যুক্ত করেন। বলা হয়, নবাবের হুকুমে বাবুর্চিরা শিরমালের স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে জাফরান ও গোলাপজল ব্যবহার শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে শিরমালকে আরও বিলাসবহুল ও রাজকীয় খাবারে পরিণত করে।
Discussion about this post