মধ্যযুগের এক অন্ধকার সময়। গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বাঙালি সমাজে। একদিকে বর্ণবিভেদ অন্যদিকে নারীদের সামাজিক শ্বাসরোধ। সেইসময় ব্রিটিশ শক্তিও ভারতে নিজেদের মাটি শক্ত করতে তৎপর। সেই এক অচল অবস্থা ভেদ করে এগিয়ে এলেন একজন বাঙালি। যাকে পরবর্তীতেও সকলে মনে রাখবে ‘রাজা’ হিসেবেই। রাজা রামমোহন রায়। প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিভেদের দেওয়ালে প্রথম ফাটল ধরিয়ে ছিলেন যিনি।
রামমোহনের কৈশোর থেকেই হিন্দুদের গোঁড়ামিকে তীব্র অপছন্দ। বয়স তখন মাত্র ১৬। কিন্তু মেরুদন্ডের বয়স ১৬ পেরিয়েছে অনেক আগেই। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বাবার রোষের পাত্রও হন। গৃহহীন হন ওই মাত্র ১৬ তেই। ভয় পাননি বরং যাত্রা করেন সোজা তিব্বতে। বাড়ি ফিরে গঠন করেন আত্মীয় সভা। গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে সে যেন এক সজোরে আঘাত। ধীরে ধীরে আরো মজবুত হচ্ছে তাঁর শিড়দাঁড়া। ‘কালাপানি’ পেরোলেই যেসময় হিন্দু সমাজে অচ্ছুৎ মানুষজন, সেই সময়ও তিনি স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন প্রথম বিলেত যাত্রা করার। কিন্তু সতীদাহ প্রথা রদ করে সমগ্র হিন্দু বিশেষত কট্টর ব্রাহ্মণ সমাজের বিরাগভাজন হন। জুড়ে রায় মৃত্যু শঙ্কাও।
তবে ‘লার্জার দ্যন লাইফ’ রামমোহনের গায়ে একটা আঘাত করাও ওতো সহজ নয়! ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া সঙ্গে শরীরচর্চা তাঁকে গড়ে তুলেছিল পর্বতসম। রোজ ভোর চারটেয় উঠে এক কাপ কফি। তারপর মর্নিং ওয়াক। বাড়ি ফিরে এক কাপ চা। সঙ্গে থাকত প্রত্যহ পালোয়ান দ্বারা সরষের তেল দিয়ে দলাই মালাই। বারো সেরা দুধ, পঞ্চাশটা আম আর একটা গোটা পাঁঠা খাদ্য তালিকায় থাকলেও তাঁর হজমের কোনো ত্রুটি নেই। আজ্ঞে হ্যাঁ! ভ্রু কপালে উঠলেও এটিই সত্যি। তিনি একাই খেয়ে ফেলতে পারতেন এক কাঁদি নারকেল! খাওয়া দাওয়ার সাথে রোজ ব্যায়াম করে তাঁর শরীর একেবারে মজবুত! তাই কেউ যদি তাঁকে খুনের হুমকিও দেয় তিনি দাপট দেখিয়ে বলতেন,” আমাকে মারবে এমন ক্ষমতা আছে তাদের?”
তবে সেসব বাদেও আত্মসুরক্ষার জন্য বুকে লুকিয়ে রাখতেন একটি ছোরা। সঙ্গে থাকত লাঠি। আর সেটি সাধারণ কোনো লাঠি নয়। খাস লাঠি! যার ভিতরে থাকত তরোয়াল! সমাজকে সঠিক স্রোতে ফিরিয়ে আনতে যাঁকে জীবন আশঙ্কার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে তো এমন করতে হবেই! এমনকি এটাও বলা হতো তাঁর মাথার পাগড়ি নাকি কারোর মাথায় এঁটে উঠত না! আসলে ‘রাজা’র মুকুট তো রাজা বাদে বাকিদের কাছে অনতিক্রম্যই হবে!
Discussion about this post