খাতায় কলমে বৈশাখ-জৈষ্ঠ হলেও, দোল পূর্নিমার পর থেকেই দুই বাংলায় গ্রীষ্মের আগমন শুরু হয়ে যায়। তবে বাংলার বছর শুরুর থেকেই ক্রমাগত বেড়ে চলে গরমের দাপট। ভোজন রসিক বাঙালির গ্রীষ্মকাল কাটে দই, আইসক্রিম, লস্যি, আম পোড়ার সরবত সহ বিভিন্ন ঠান্ডা খাবারের স্বাদ আস্বাদনে। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে ‘কুলফি মালাই’ সব বাঙালির প্রিয় একটি জিনিস। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের হাত ধরেই দুই বাংলায় মালাই কুলফির আগমণ। তবে বাংলাদেশের অন্তর্গত কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি মালাইয়ের স্বাদ সব জায়গার থেকে ভিন্ন। যে স্বাদ পূরণ করেছে স্বয়ং রবি ঠাকুরের রসনার বাসনা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া আর শিলাইদহ নামের দুটি গ্রাম বিখ্যাত ‘কুলফি মালাইয়ের গ্রাম’ নামেই। কুলফি মালাই প্রস্তুত ও বিক্রয়, এই প্রাচীন জনপদের বহু পুরনো পেশা। আইসক্রিমের মত, কুলফিকে বাক্সে তৈরি করা হয় না। লালসালু কাপড়ে মোড়ানো বড় সিলভারের পাতিলে বরফের আড়ালে রাখা হয় সুস্বাদু কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুলফি। যার ফলে গ্রীষ্মে বাংলাদেশের আইসক্রিম ও মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে কুমারখালী এক অন্যতম আকর্ষণ। অসাধারণ স্বাদ ও সুঘ্রাণের জন্য এখানকার কুলফির সুখ্যাতি করেছে সারা বাংলাদেশে জুড়ে। কুষ্টিয়ার এক প্রসিদ্ধ কুলফি প্রস্তুতকারকের কথায়, “কুলফি বানাতে প্রথমে দুধকে ফুটিয়ে তা ঘন করা হয়। তারপর ঘন দুধের সাথে চিনি, এলাচ, বাদাম, কিশমিশ ও গরম মসলার সিক্রেট রেসিপির মেশানো হয়। এরপর তা বরফের মাঝে রাখা হয়। ২০ কেজি ঘন দুধ থেকে বরফ প্রস্তুত করা হয় ১০০ থেকে ১৫০ পিস কুলফি। কিছু জায়গায় জাফরান ও পেস্তা ব্যবহার করা হয়।”

কুষ্টিয়ার কুলফির সাথেই জড়িয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নাম। স্থানীয় ইতিহাস প্রেমীদের মতে, পদ্মা-গড়াইয়ের মধ্যবর্তী স্থান ছিল ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অন্তর্গত। ১৮৯১ সাল থেকে শুরু করে ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ গ্রামেই থাকতেন। এখানকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কবি অগণিত প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প রচনা করেছেন। লোকমুখে প্রচলিত, এই সময়েই সম্ভবত কুষ্টিয়ার কুলফির প্রতি আকৃষ্ট হন স্বয়ং কবিগুরু।
মালাই কুলফি প্রচলিত আইসক্রিমের মতো শক্ত হয় না। এটি ঘন ও হিমায়িত মিষ্টি হয়। তাই এই ঘনত্বের কারনেই কুলফি আইসক্রিমের চেয়ে গলে যেতে আরও বেশি সময় নেয়। কুলফি জড়িয়ে আছে বাঙালির ছোটবেলায় আবেগের সাথে। বিভিন্ন নামী দামী কম্পানির রকমারি ফ্লেভারের আইসক্রিমের মাঝে আজও বাঙালির মনের অনেকটা জায়গা দখল করে আছে পছন্দের ‘মালাই কুলফি’।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – মহঃ সাইফুল ইসলাম
Discussion about this post