মোহনবাগান! শুধু একটি ক্লাব নয়, এ হল বাঙালির আবেগ! মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যেন ফুটবলপ্রিয় বাঙালির জীবনেরই অঙ্গ। আজ মোহনবাগান দিবস – ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থেকে এক ব্রিটিশ ক্লাবকেই পরাস্ত করে শিল্ড জিতে নেওয়ার ১১০ তম বছর। আজকের দিনটি যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি ভারতী ফুটবলের ইতিহাসেও কতখানি মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ, তা বোধহয় আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এহেন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখবেন না কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাও কি হয়?
পরাধীন ভারতে সেই সময় বিদেশী ফুটবল দল, বিশেষত সামরিক দলগুলোরই রমরমা ছিল। কিন্তু ১৮৯২ সালে ইউরোপীয়ান ক্লাব ইস্ট সারে’কে হারিয়ে ট্রেডস কাপ জিততে সক্ষম হয় ‘শোভাবাজার ক্লাব’। বাঙালি বুঝতে পারে, চাইলেই শাসকদের হারানো সম্ভব। পরবর্তীকালে সেই সব শক্তিশালী ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতে নেয় মোহনবাগান ক্লাব। ঐতিহাসিক দিনটা ছিল ২৯ জুলাই, ১৯১১ সাল, ফাইনালে ২-১ গোলে জয়লাভ করে সবুজ-মেরুন। তৎকালীন দলে ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ী (অধিনায়ক), হীরালাল মুখার্জী, সুধীর চ্যাটার্জী, ভুতি সুকুল, মনমোহন মুখার্জী, নীলমাধব ভট্টাচার্য, রাজেন সেনগুপ্ত, কানু রায়, অভিলাষ ঘোষ, হাবুল সরকার এবং বিজয়দাস ভাদুড়ী। তাঁদের মধ্যে ২৯ জুলাই গোল করেন অভিলাশ ঘোষ ও শিবদাস ভাদুড়ী। আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল দেখতে মাঠে দর্শক সমাগম হয়েছিল লক্ষাধিক। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এটি ছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা।
এবার আসি কবিগুরুর প্রসঙ্গে। কয়েক বছর আগে শিল্ড জয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘এই সময়’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় ‘দে গোল গোল’ শীর্ষক একটি কবিতা। পাঠকবৃন্দ এটি কবিগুরুর লেখা ভেবে ভুল করেন। আসলে এই কবিতাটি ছিল কবিগুরুর লেখা ‘ঝুলন’ কবিতার একটি প্যারোডি, যাতে একটি লাইন ছিল ‘দে দোল দোল’। এটি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি মোহনবাগান নিয়ে কবিগুরু কখনও কলম ধরেননি? মোহনবাগানের ঐতিহাসিক জয়ের উল্লেখ না থাকলেও, তাঁর লেখায় মোহনবাগানের প্রসঙ্গে এসেছে অনেকবারই। তাঁর রচিত ‘দুই বোন’ উপন্যাসে ঊর্মিমালার মন জয় করতে শশাঙ্ক তাঁকে মোহনবাগানের খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর অন্য একটি রচনা, ‘সে’ বইতে নাতনি পুপেকে খুশি করতে মোহনবাগানের উল্লেখ করেছেন বার দুয়েক। একবার লিখেছেন, স্মৃতিরত্ন মশাইয়ের মোহনবাগানের হয়ে গোলকিপারির কথা। আবার লিখেছেন, মোহনবাগানের খেলা দেখতে গিয়ে সাড়ে তিন পয়সা পকেটমারির কথা। তাঁর বিখ্যাত ‘শেষের কবিতা’তেও মোহনবাগানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
তখনকার সময়ের মেয়েদের মধ্যেও কতখানি জনপ্রিয় ছিল এই ক্লাব, তা-ও কবিগুরুর রচনা থেকে ভালোই আন্দাজ করা যায়। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছুই নেই! মান্না দে মহাশয় তো সেই কবেই বলে গেছেন, “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল….”
চিত্র ঋণ – দ্য মোহনবাগান এসি
Discussion about this post