‘ডেইলি নিউজ রিল’ প্রথম আপনাদের সামনে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে বিএসসি নার্সিংয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রীদের হতাশজনক অবস্থার কথা। আমরাই প্রথম আপনাদের জানাই কীভাবে তাদের ওপর জোর খাটানো হচ্ছে ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার আগেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য। তার মধ্যেই সামনে এলো আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিং স্কুলের বিএসসি নার্সিংয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী মালদা নিবাসী ঈশানী ঘোষ (নাম পরিবর্তিত) জানান, “আগামী ১৩ জুলাই থেকে তাদের হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে কর্তৃপক্ষ। এখানেই শেষ নয়, প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচা করে তাদের সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে করোনা টেস্ট করার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকেরা স্বেচ্ছায় ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন এমন চিঠি লিখিয়ে নিয়ে আসার জন্য চাপ তৈরি করছে এক বেসরকারি নার্সিং স্কুল। এমনকি ছাত্রীদের না জানিয়ে তাদের জিনিসপত্র এক হোস্টেল থেকে অন্য হোস্টেলে সরিয়ে আনা হয়েছে। ট্রেনিং স্কুল কলকাতার অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে আমরা আইনের দ্বারস্থও হয় কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা মেলেনি।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৯ জুলাই থেকে রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় জারি হয়েছে সম্পূর্ণ লকডাউন। এরকম পরিস্থিতিতে ছাত্রীরা এসে থাকবে কোথায় বা কীভাবে স্কুলে এসে পৌঁছবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কাকদ্বীপ নিবাসী এক ছাত্রী মধুমিতা তরফদারের (নাম পরিবর্তিত) কথায়, “নতুন করে লকডাউন জারি হয়েছে এরকম পরিস্থিতিতে এতদূর থেকে স্কুলে কি করে গিয়ে পৌঁছাব? সে ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন রকম সাহায্য করছে না। বরং স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে স্পেশাল পারমিশন করে স্কুলে আসতে।” আবার ফাইনাল ইয়ারের আরেক ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা বোসের (নাম পরিবর্তিত) কথায়, “আমার শারীরিক একটা সমস্যা আছে। তাই একসাথে এতো জনের সঙ্গে একই জায়গায় কী করে থাকবো বুঝতে পারছি না। নতুন যেখানে স্কুল ট্রান্সফার করা হয়েছে সেই জায়গার পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না। এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে। তার উপর পিপিই কিট ও করোনা টেস্টের সম্পূর্ণ খরচও আমাদের ওপরেই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ছাত্রীদের তরফে আসছে একাধিক অভিযোগ। কিন্তু কী বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? এরকম নানা প্রসঙ্গে নিয়েই আমরা জানতে যোগাযোগ করি ‘ডিসান স্কুল অফ নার্সিং’এর ভাইস প্রিন্সিপাল শিপ্রা দে’র সঙ্গে। তিনি এক প্রকার উল্টো কথাই বললেন। ওনার কথায়, “এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ, পরীক্ষা ও তাদের স্বার্থের কথা ভেবেই করা হয়েছে। কাউকে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে না। কেউ আসতে না পারলে এবং আমাদের জানালেই আমরা পদক্ষেপ নেব। বিষয়টি নিয়ে আমরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলবে। ছাত্রীদের আমরা করোনা টেস্ট করে আসতে বলেছি তাদের সুরক্ষার কথা ভেবেই। কিন্তু কোনওরকম পিপিই কিট আমরা কিনতে বলিনি।” তিনি আরও বলেন, “মেয়েদের কথা ভেবেই ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব নিয়ে মেয়েদের জিনিসপত্র এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে ট্রান্সফার করেছে। সেক্ষেত্রে কেউ কোন জিনিস আগের হোস্টেলে ফেলে এসে থাকলে সে নিজে সেখান থেকে তা নিয়ে আসতে পারে”।
এরপরেও অভিযোগ কেন সঠিক উত্তর দিচ্ছে না বেসরকারি নার্সিং স্কুলগুলো? যেখানে রাজ্যের সমস্ত পরীক্ষা স্তব্ধ, যান চলাচল বন্ধ সেখানে বেসরকারি নার্সিং স্কুলগুলোর অবস্থা অনেকটা সবকিছু জেনেও চুপ করে থাকার সামিল। এমনটাই মনে করছেন এই দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া নার্সিং পড়ুয়ারা।
Discussion about this post