শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ভারতবর্ষ। বিশ্বের দরবারে ‘বর্ণিল উৎসবের দেশ’ হিসেবে পরিচিত ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বছরের নানা সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা বৈচিত্রময় উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভিন্ন আচার ও রীতিতে পালিত হওয়া প্রতিটি উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে, আঞ্চলিক ধর্মীয় লোকগাথা অথবা প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরা। এই উৎসবগুলির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কেরালার ‘পুলি-কালি’ উৎসব দেশের প্রাচীন এই উৎসব গুলির মধ্যে অন্যতম।
কেরালা, ভারতের দক্ষিনাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা ধরণের লোকশিল্পের জন্য সারা দেশে পরিচিত এই রাজ্য। ‘পুলি কালি’ কেরালার একটি প্রাচীন বিনোদনমূলক লোকশিল্প। কেরালার থিসুর ও পালাঘাট জেলায় এই শিল্প মঞ্চায়ন ও অনুশীলন করা হয়। ‘পুলি কালি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘বাঘের খেলা’। মূলত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ‘ওনাম’ উৎসবের অংশ হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়। শোনা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে কোচির মহারাজা এই উৎসবের সূচনা করেন।
বর্তমানে কেরালার বিভিন্ন প্রান্তে মহাসমারোহে এই উৎসব পালিত হয়। প্রাচীন এই উৎসবের মূল ভিত্তি বাঘ শিকারের পদ্ধতি। বাঘশিকারকে কেন্দ্রে রেখে গানবাজনা, নাটক ও বাঘের খেলা নানা নৃত্য শৈলীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। বার্ষিক ফসলের উৎসব ওনাম উদযাপনের চতুর্থ দিনে উজ্জ্বল হলুদ, লাল এবং কালো রঙে বাঘ এবং চিতাবাঘের মতো সেজে মুখোশ পরে চিত্রশিল্পীরা থিসুর অঞ্চলে একত্রিত হয় তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত হয় এই লোকশিল্প।
উদুক্কু এবং থাকিলের মতো যন্ত্রের তালে নাচতে থাকেন তারা। নাচ পরিবেশনের পর, গায়ে চকরাবকরা আঁকা, বাঘের মুখোশ, নকল দাঁত, গোঁফদাড়ি পড়ে কুশীলবরা থিসুর জেলার স্বরাজ রোডে মিছিল বের করে। কেরলের শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষদের কাছে পুলি কালি এক দারুণ মজার উৎসব। অন্যান্য উৎসবগুলির থেকে স্বতন্ত্র ‘পুলি কালি’ উৎসবে ভিড় জমান সারা কেরালার বহু উৎসবপ্রিয় মানুষেরা।
Discussion about this post