ভারতীয় ডাকঘরের ইতিহাসে পোস্টকার্ড ধারণাটি এখন বিলুপ্তপ্রায় বলাই চলে। বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্তও পোস্ট-কার্ডের মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তার প্রকাশ করতেন বহু মানুষ। আজকাল ইন্টারনেটের যুগে চিঠি পাঠানোর প্রথা মানুষ প্রায় ভুলতেই বসেছে। এই পরিস্থিতিতেই রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তাপস পাল পুরনো দিনের সেই প্রথাকেই আবার ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। তবে এক্তু ভিন্ন আঙ্গিকে। এ বছর পয়লা বৈশাখের দিনে ভারতীয় পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে রাজ্যের ১৪২৭ জন ডাক্তার ও নার্সদের ‘ভগবান’ সম্মোধনে শুভেচ্ছা বার্তা লিখে পাঠালেন তিনি। ডিজিটাল মাধ্যমে চিঠি লেখার কৌশলের সঙ্গেই গতানুগতিক ‘চিঠি আই হ্যায়, চিঠি আই হ্যায়’ ডাকটিকে জীবিত রাখতে এই ছোট্ট প্রচেষ্টা তাঁর।
করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য-কর্মীরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখার শপথ নিয়েছেন। তাঁদের অবদানকে ‘ভগবান’ তকমা দিয়ে তাপসবাবু “লহ প্রণাম” লিখে সেই শুভেচ্ছা বার্তা ভারতীয় ডাকবাক্সে ফেললেন। চিঠিতে তাপস বাবু লিখেছেন “এই সভ্যতার একজন শিক্ষক হয়ে ‘ভগবান’ শব্দটা আপনাদের জন্যই রাখলাম। সভ্যতা আপনাদেরই হাতে। কুর্নিশ সহ ‘লহ প্রণাম’ এই ১ লা বৈশাখে।” ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে তাপস বাবু জানালেন, “খালি চোখে অদৃশ্য এক ভাইরাসের কাছে পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়, শক্তিশালী দেশ, জাতি, সব রকমের ঐশ্বরিক শক্তি, তন্ত্র বিদ্যা, বশীকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, ঝাড়ফুঁক সব কিছুই পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু একমাত্র স্টেথোস্কোপ এখনও বশ্যতা স্বীকার করে নি। পৃথিবীর আসল ভগবান কে বা কারা? উত্তর হলো সেই সমস্ত ডাক্তার ও নার্সরা যারা মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন করোনার (কোভিড-১৯) কালো ছোবল থেকে।” তাই তাঁদের প্রতি তাঁর এই ছোট্ট সম্মান বার্তা। এই ইন্টারনেটের যুগে ভুলতে বসা সেই চিঠি লেখার প্রথাকে আবার নতুন ভাবে তুলে আনার জন্য ড. তাপস পালের এই প্রচেষ্টাকে সেলাম জানাতেই হয়।
Discussion about this post