পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব যার বাইরে দেওয়ালে সাইন বোর্ডে বড় করে লেখা, “ডগস অ্যান্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড।” মাস্টারদা সূর্য সেনের দল ছক কষে ফেলেছে ইংরেজদের এই প্রমোদ কেন্দ্র আক্রমণের। কিন্তু পরপর দু’বার তাঁদের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত এল ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মাস্টারদা ঠিক করলেন এই ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেবেন তাঁর দলের মহিলা বিপ্লবীদের ওপর। কল্পনা দত্তকে পুলিশ গ্রেফতার করলে এই হামলার নেতৃত্বের দায়িত্ব আসে প্রীতিলতার কাঁধে।
২১ বছরের প্রীতিলতা মাস্টারদাকে কথা দিলেন,নিজের দেশের লোকেদের উপর ইংরেজদের চূড়ান্ত অপমান আর অত্যাচারের প্রতিশোধ তিনি নেবেন। অবশেষে হামলার দিন ঠিক হয় ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবী দল রাত্রি ১০:৪৫-এ এসে পড়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে। পুরুষ ছদ্মবেশী প্রীতিলতার পরনে ছিল পাঞ্জাবি আর মালকোঁচা দেওয়া ধুতি।মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। তাঁর নেতৃত্বে ছিল ৭ জনের বিপ্লবী দল। হামলার পরিকল্পনা মাফিক তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায় দল। প্রীতিলতার হাতে ওয়েবলি রিভলবার আর বোমা। ৯ ঘড়া পিস্তল আর রাইফেল নিয়ে প্রস্তুত বাকি বিপ্লবীরা। শুধু দলনেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষা। প্রীতিলতা হুইসেল বাজাতেই ইউরোপিয়ান ক্লাবের উদ্দেশ্যে ছুটে যায় বোমা। ঘন ঘন গুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে ক্লাব বাড়ি। ক্লাবের ভেতরে তখন ইংরেজদের ছুটোছুটি।
বিপ্লবীদের হামলায় নিহত হন মিসেস সুলিভান। সাথে আহত হন ১১ জন ইংরেজ। পাল্টা গুলি আসে ইংরেজদের তরফ থেকে। হঠাৎই এক ইংরেজ মিলিটারির গুলি এসে লাগে প্রীতিলতার গায়ে। দলনেত্রী সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন বাকি বিপ্লবীদের ফিরে যেতে। তিনিও তাঁদের সঙ্গে কিছুটা দূর এগিয়ে যান। কিন্তু আহত অবস্থায় ইংরেজরা তাঁকে প্রায় ধরে ফেলার পরিস্থিতিতে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে প্রীতিলতা পকেটে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড পুরে দেন মুখে। তাঁর অনুরোধে কালীকিংকর দে আরো খানিক পটাশিয়াম সাইনাইড ঢেলে দেন প্রীতিলতার মুখে। বিষের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অগ্নিকন্যা।
Discussion about this post