বাংলার অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার তখন সবে আই.এ পাশ করেছেন। ফল প্রকাশে জানতে পারলেন মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সকল ছাত্রদের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। ভবিষ্যৎ যথেষ্টই উজ্জ্বল। ছোট থেকেই পড়াশোনায় বরাবর নজর কেড়েছেন সকলের। পাশাপাশি খেলাধুলোয় কোনো অংশে কম নন। স্কুলে থাকতে কল্পনা দত্ত ছিলেন তাঁর ব্যাডমিন্টন খেলার সাথী। যাই হোক, আই.এ পাশ করে মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় আসেন। বেথুন কলেজে আর্টসে বি.এ পড়ার সুযোগ পান। সহপাঠিনীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতেও বেশি সময় লাগেনি। ‘প্রীতি’র আন্তরিকতা এমনই। খুব সহজেই মিশে যেতেন সকলের সাথে। কেউ কি তখনও আন্দাজ করতে পেরেছিল যে লাজুক, অন্তর্মুখী, মেধাবী প্রীতি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ে নন। ছাইয়ের নিচে চাপা বিপ্লবের আগুন, যে আগুন নিভবে না ইংরেজ শাসকদের শত চেষ্টাতেও।
কলেজে দর্শন বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করলেন তিনি। কিন্তু এই অগ্নিকন্যা মেধা আর সাহসিকতাতেই শুধু থেমে নেই।বেথুন কলেজে সকলের প্রীতি অপূর্ব বাঁশি বাজাতেন। সেই চিত্তাকর্ষক উদাসীন সুরে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলতেন শ্রোতারা। তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্নতা বর্তমান থেকে। বাঁশিবাদক প্রীতিলতার তৈরী হয়েছিল গুণমুগ্ধের একটি দল। বাণারসী ঘোষ স্ট্রিটের হোস্টেলের ছাদে বসে একলা মনেই যখন বাঁশি বাজাতেন তাঁকে ঘিরে বসে থাকতেন হোস্টেলের বান্ধবীরা। কখনও আবার তাঁদের জোরাজুরিতেও হাতে বাঁশি তুলতে হত।
তবে আর মাত্র কয়েকটি বছরের অপেক্ষা। এই প্রীতিলতাই যে এবার সরাসরি যুক্ত হবেন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল। দর্শনে অনার্স করবার ইচ্ছে থাকলেও দেশের স্বাধীনতার ইচ্ছের কাছে শেষমেশ হেরে গিয়েছিল তা। পরবর্তী দৃঢ় পদক্ষেপে যুক্ত হন বিপ্লবী দলে।
Discussion about this post