কথায় আছে “কালি কলম মন, লেখে তিনজন”। মনের কথা লেখায় ফুটিয়ে তুলতে একখানা যুতসই কলমের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া অনেকের কাছেই পেন শুধু একটা নির্জীব বস্তু নয়, এর সাথে জড়িয়ে থাকে বেশ খানিকটা আবেগ। থাকে অনেকটা শৌখিনতাও। এই ঘোর বলপেনের যুগেও বাঙালির বুক পকেটে জায়গা করে নেয় ওয়াটারম্যান, শেফার্ড, পার্কার বা সুলেখা কোম্পানির ঝর্ণা কলম। চলতি কথায় যা ফাউন্টেন পেন নামেই বিশেষ প্রচলিত। মুশকিল একটাই, দামী কলম একবার খারাপ হলে তা টেবিলের কোণে ফেলে রেখে ধুলো খাওয়ানো ছাড়া আর উপায় থাকে না। তবে মুশকিল আসানও আছে এই মহানগরীর বুকেই। জানতে চান? কী সেই মুশকিল আসান!
এ শহরের প্রাণকেন্দ্রেই রয়েছে পেনের হাসপাতাল। প্রিয় কলমের অসুখ সারাতে সেখানেই ভিড় জমান কলমবিলাসীরা। ধর্মতলা মেট্রো ষ্টেশনের চার নম্বর গেট দিয়ে বেড়িয়ে ফুটপাথের বাঁ-দিকেই ঝোলানো ‘পেন হসপিটাল’ বোর্ড। সরু গলির একপাশে স্বমহিমায় ছোট্ট দোকানঘর থুড়ি পেনের হাসপাতালটি দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর। ১৯৪৫ সাল থেকে নানান কলমের অসুখ সারিয়ে তুলছে এই হসপিটালের ডাক্তারবাবুরা। তিন পুরুষ ধরে এই কাজটিকে যেন শিল্পেরই মর্যাদা দিয়েছেন তারা। বাবা মহম্মদ সুলতানের দুই উত্তরসূরী ইমতিয়াজ ও তাঁর ভাই মহম্মদ রিয়াজ এই হাসাপাতালের হাল ধরেছিলেন। চলতি বছরে ছোট ভাই রিয়াজকে হারিয়ে ইমতিয়াজ ভাই-ই পেন হসপিটালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
তিনি জানান যে আগেকার দিনে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হত ওয়াটারম্যান, শেফার্ড, পিয়ার কারদা, উইলসনের মতো রয়্যাল পেনগুলিকে। এসব খারাপ হলে সারাই করার লোক ছিল না তখন। ফলে কলমপ্রেমীদের দুঃখ লাঘব করার ভাবনা থেকেই পেন হসপিটালের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দোকানের নামকরণ সূত্রে তিনি বলেন যে আগে দোকানের নাম ছিল ‘সেল অ্যান্ড সার্ভিস’। হাসপাতালে রোগীদের ট্রিটমেন্ট করার মত দোকানেও যেহেতু পেনের ট্রিটমেন্ট চলে তাই এইরূপ নাম রাখা।
শহরের পেন সংগ্রাহকদের স্মৃতি বলছে, এমন হাসপাতাল প্রত্যেক এলাকাতেই ছিল। কালের নিয়মে যার বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ইমতিয়াজের পরিবার এখনও কলম হাসপাতালের উপর নির্ভর করেই সংসার চালান। বর্তমানে আধুনিকতার যুগে ক্রেতার সংখ্যা কমলেও হাল ছাড়েনি এই তিন পুরুষের ব্যবসায়ী। যে কজন শখদার পেন সারাতে আসে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই তার আনন্দ। তাই আপনার বাড়িতেও যদি এমন কোনো পেনের অসুখ সারাতে হয়, তাহলে আর দেরি না করে সোজা চলে যান ৯ জওহরলাল নেহেরু রোড, পেন হসপিটালের এই ঠিকানায়।
Discussion about this post