২১ শে সেপ্টেম্বর, সাধারণ দৃষ্টিতে এই দিনটিকে আর পাঁচটা দিনের মত সাধারণ মনে হলেও, বিশ্ব মানচিত্রে দিনটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’ রূপে পরিচিত। শান্তি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যই এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও এই দিনটি পালন করা হয়। তবে কোনো নির্দিষ্ট দিনে নয়, নেহাতই ফুটবলের প্রতি ভালবাসার জন্যই ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি হয়েছিল নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে। আর এই অবিশ্বাস্য ঘটনা সম্ভব হয়েছিলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের হাত ধরে।
সময়টা ১৯৬৯, ঘরোয়া কিংবা মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করে সান্তোস তখন বিশ্ব সফরে। তার ঠিক দুই বছর আগেই গৃহযুদ্ধ শুরু হয় নাইজেরিয়ায়। দেশের পূর্বের রাজ্যগুলি এক জোট হয়ে ‘বায়াফ্রা’ রাষ্ট্র গঠন করেছিল। এই যুদ্ধে মারা গিয়েছিল ২০ লাখের বেশি সাধারণ মানুষ। ঘরছাড়া হয় প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ। এই যুদ্ধের মাঝেই নাইজেরিয়ায় খেলতে নামল নেমেছিল সান্তোস ফুটবল দল। জানা যায়, সান্তোস দল পা রাখার পর নাইজেরিয়ায় বন্দুকের গর্জন থেমে গিয়েছিল। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি রেখেছিল দুই পক্ষ। ওগবেমুদিয়া স্থানীয়ভাবে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। খুলে দিয়েছিলেন বেনিনের সঙ্গে বায়াফ্রার সংযোগ সেতু। এতে দুই অঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার ফুটবলপ্রেমীর সামনে খেলা হয়েছিল এই প্রীতি ম্যাচ। প্রীতি ম্যাচে নাইজেরিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে সান্তোস। দুটিই গোল করেছিলেন পেলে। দর্শকদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন উঠে দাঁড়িয়ে সম্মাননা।
তবে ঠিক সান্তোসের বিমান ওড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার যুদ্ধ শুরু হয়। বিমান থেকেই অস্ত্রের গর্জন শুনতে পেয়েছিলেন সান্তোসের সদস্যেরা। সান্তোস কিংবদন্তি লিমার ভাষ্য, “যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়া আমাদের দাপটের পক্ষে একটি অর্জন। আমরা বলতে পারতাম, চারপাশে তো যুদ্ধ, ওখানে যাব কেন? কিন্তু আমরা তা করিনি।সেখানে যেতে চেয়েছি, খেলাটা বাধ্যতামূলক ছিল না।” তবে পেলের এই যুদ্ধ থামানোর কথা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নাইজেরিয়ান ব্লগার ওলাজো আয়েগবাও। সান্তোসের সফরে আসার সে সময়ের সংবাদপত্র ঘেঁটে আয়েগবাও দেখেছেন, যুদ্ধবিরতির কথা কোথাও লেখা হয়নি।
সেই দিনের পর কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর। তবে এতদিন পরেও বিশ্বের আনাচে-কানাচে ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে ঘুরপাক খায় এই গল্প। ২০১২ সালে গ্যাবনে ফিরে পেলে বলেছিলেন, “ওরা বলেছিল আমরা এখানে আসতে পারব না। কারণ যুদ্ধ চলছে। কিন্তু আমরা এখানে (লিব্রেভিল) খেলেছি, আর কিনশাসাতেও খেলেছি। তখন আলী বঙ্গ (গ্যাবন) ছিলেন প্রেসিডেন্ট এবং তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ থামাতে হবে। কারণ সবাই পেলের খেলা দেখবে। তারা যুদ্ধ থামিয়েছিল। আমরা খেলে চলে যাই। এটা ছিল অসাধারণ স্মৃতি। কখনো ভুলব না।”
Discussion about this post