‘আরে মশাই আর দুটো নিন, এই তো সময় খান খান।’ বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই কী নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে?! হ্যাঁ একদম ঠিক, বাঙালির যে কোনো অনুষ্ঠানে শেষ পাতে কোনো না কোনো একটা মিষ্টি চাই-ই চাই। কারণ বাঙালি মানেই সর্বদা রসে-বসে। মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির শেষ পাতে একটা মিষ্টি হবে না, এরকম মানুষের বোধহয় ভূ-ভারতে দেখা মেলা ভার। আর সেই মিষ্টি যদি আমতার সুস্বাদু পান্তুয়া হয়, তাহলে তো ষোলো কলা পূর্ণ। বহুযুগ ধরেই পান্তুয়া তৈরিতে সারা দেশের মধ্যে বেশ নামডাক রয়েছে হাওড়ার আমতা এলাকার। তবে শুধু রাজ্য বা দেশেই নয়, এখানকার পান্তুয়া দেশের সীমানা পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জাম্বিয়ার মতো বিশ্বের বিভিন্ন তাবড় তাবড় দেশেও। সাহেব থেকে মালি সবার প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছিল আমতার পান্তুয়া।
আমতার বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকানে তৈরি পান্তুয়া কয়েক দশক ধরেই মন ভরিয়ে চলেছে আপামর বাঙালির। আমতা রেলস্টেশনের কলতলার মোড় থেকে সিটিবাস স্ট্যান্ড অব্দি এসে বাজারের রাস্তায় হাঁটলে চোখে পড়বে একের পর এক মিষ্টির দোকানগুলো।কোনো কোনো দোকান ৫০ বছর, তো কোনোটি আবার শতবর্ষেরও বেশী সময় ধরে স্বমহিমায় বিরাজ করে চলেছে। এগুলির মধ্যে অন্যতম চড়িতের পান্তুয়া, শীতলা মিষ্টান্ন ভান্ডারের পান্তুয়া ও ভূপতি ময়রার দোকান। এছাড়াও রসপুরের বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান মিলিয়ে প্রায় ৩০টির কাছাকাছি ছোটো-বড়ো দোকানে বহুদিন ধরে তৈরি হয়ে আসছে আমতার বিখ্যাত পান্তুয়া। পকেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই পাঁচ টাকা থেকে পনেরো টাকা, এর মধ্যে নানান দামেই পাওয়া যায় এই একটুকরো অমৃত। শোনা যায়, মহানায়ক উত্তমকুমার ও মজে ছিলেন আমতার এই পান্তুয়ায়। শুধু তাই নয়, এখানকার পান্তুয়া নাকি পাড়ি দিত দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাড়িতেও। এছাড়া হাওড়া-মার্টিন রেল চলাকালীন ট্রেনের যাত্রীদের কাছে ভীষণ প্রিয় হয়ে ওঠে এই পান্তুয়া।
তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বদলে গেছে অনেক কিছুই। আজকাল মিষ্টিপ্রেমীদের ভিড় জমে আড়ম্বরে ঠাসা ঝাঁ চকচকে দোকানগুলোতেই বেশি। তবে দোকানের মালিকদের বক্তব্য, দোকানে নয়, মানুষ মজবে মিষ্টির রসেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আধুনিক সময়ের কাঁচের দরজা লাগানো যেকোনো মিষ্টির দোকানে তৈরি পান্তুয়াকে স্বাদের দিক থেকে বলে বলে গোল দেবে আমতার একশো বছরের পুরনো দোকানগুলোর পান্তুয়া। এখানকার পান্তুয়ার অভিনবত্ব হল, এই পান্তুয়া বাজার চলতি পান্তুয়ার মতো থ্যাসথ্যাসে নয়। এর মোটা ছালের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে এলাচ দানা মেশানো মিষ্টি রস। যা আপনাকে আহ! বলতে বাধ্য করবেই। তবে আর কি! ঘুরতে ঘুরতে চলেই আসুন একদিন আমতার পান্তুয়া খেতে। তবে হ্যাঁ যাওয়ার আগে জেনে রাখুন, এখানে বিখ্যাত দোকানগুলোতে বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পান্তুয়া। তাই সকালেই যাওয়া ভালো আমতার বিখ্যাত পান্তুয়ার স্বাদ নিতে।
Discussion about this post