পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত কর্তৃক পাঁচটি কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের বিপরীতে পাকিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্থগিত করা। এই প্রেক্ষাপটে সিমলা চুক্তির তাৎপর্য এবং ভারতের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব আলোচনা করা জরুরি।
সিমলা চুক্তি: শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস (১৯৭২)
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, উভয় দেশের মধ্যে শান্তি পুনরুদ্ধার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২ জুলাই হিমাচল প্রদেশের সিমলায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো স্বাক্ষর করেন। এটি ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের সম্পর্কের একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।
সিমলা চুক্তির মূল শর্তাবলী:
* উভয় দেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে তাদের নিজ নিজ সৈন্যদের সরিয়ে নেবে।
* জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ফলস্বরূপ যে নিয়ন্ত্রণ রেখা তৈরি হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই তা মেনে চলবে। কোনো পক্ষই মতপার্থক্যের অজুহাতে একতরফাভাবে এই রেখার কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। উভয় দেশই এই রেখা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে হুমকি বা শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে।
* এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই উভয় দেশকে সীমান্ত থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।
সিমলা চুক্তি স্থগিত: ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তীব্র উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে, তখন পাকিস্তানের এই চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা ভারতের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ভারত কর্তৃক ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পর থেকেই ইসলামাবাদ ভারতের সাথে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ করতে শুরু করে এবং কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক স্তরে উত্থাপন করার প্রচেষ্টা চালায়।
সিমলা চুক্তি স্থগিত করার মাধ্যমে পাকিস্তান একটি কৌশলগত পরিবর্তন আনতে চাইছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এমন অবস্থায় সিমলা চুক্তির অধীনে নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা যদি আর না থাকে, তাহলে উভয় দেশই একটি ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হতে পারে। যদিও পাকিস্তান কর্তৃক এই চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
পরিশেষে বলা যায়, পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সিমলা চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতাকে আরও গভীর করতে পারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Discussion about this post