বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম আজও দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই যুদ্ধ চালনা করতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমক্ষীন হতে হয়েছে। একটা এতো বড় যুদ্ধ চালনা করার মতো আর্থিক ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানের ছিলো না। পশ্চিম পাকিস্তান তাদের সমস্ত সম্পদের ওপর কব্জা করে ছিলো। তাই বাংলাদেশ পুরো পৃথিবী থেকে প্রচুর সাহায্য সহায়তা লাভ করে। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এই ধরনের অনুষ্ঠান থেকে লাভ করা সমস্ত টাকা বাংলাদেশীদের দান করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যকর ব্যাপার হলো পাকিস্তান বা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ও যুদ্ধের সময় চাঁদা তুলে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রাখে।
৭১-এর যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানের তহবিলও খালিই হয়ে যায়। সেই সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর ব্যাংক বিজ্ঞাপন দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে। সমস্ত বিজ্ঞাপনই যুদ্ধের ভেতর ধর্মকে টেনে আনে সাথে এই যুদ্ধকে ‘জিহাদি যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দেয়। দেশের সমস্ত নাগরিককে নিজেদের সম্পত্তির অন্তত ১০ ভাগ দান করতে বলা হয়। যেহেতু যুদ্ধকে জিহাদি বলা হয়েছে তাই তাদের আরও বোঝানো হয় যে তাদের সমস্ত দান আল্লাহর উদ্দ্যেশেই যাচ্ছে। যে যত বেশি দান করবে আল্লাহ্ তার ওপরে তত বেশি খুশি হবে। বাংলাদেশকে শত্রুর দেশ বলে তারা আখ্যায়িত করেন। ১৮ ডিসেম্বর অবধি ‘অন্ধকার সময়’ উল্লেখ করে এই বিজ্ঞাপন গুলো ছাপা হয়। সচরাচর পাকিস্তানের কোনো আর্থিক মন্দা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তাদের আয়ের প্রধান স্থান যেহেতু ছিলো পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ, তাই যুদ্ধের সময় তাদের এই হাহাকারের সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের থেকে তারা লোন নিয়েছিলো এরমটাও জানা গিয়েছে।
ইংলিশ-উর্দু সমস্ত পত্রিকায় সেসব বিজ্ঞাপন দেখে দেশের জনগণ তাদের সত্যিই আর্থিক সহায়তা করে। তবে তারা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সেই বর্বরতার ব্যাপারে পুরো অজ্ঞাত ছিলো। কারণ পাকিস্তান সরকার দেশের জনগণের কাছে ধর্মযুদ্ধ হিসেবে বিভ্রান্ত করেন। এতো বছর পরে এসেও সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার একটি ব্রিজ বানানোর জন্য জনগণের কাছে চাঁদা চায়, এ তাদের বরাবরের স্বভাবই বটে।
Discussion about this post