শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান নদীয়ার নবদ্বীপ ধাম। বৈষ্ণব ধর্মের অনুগামীদের কাছে নবদ্বীপ একটি পরম তীর্থস্থান। মন্দিরের শহর নামে খ্যাত, নবদ্বীপ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। তবে সমস্ত ভেদাভেদের উর্ধ্বে সম্প্রীতির মিলনভূমিও নবদ্বীপ। নবদ্বীপের বুকে ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি মসজিদ। তাদের মধ্যে অন্যতম বহু প্রাচীন পাগলা পীরের মাজার।
নবদ্বীপ শহরের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলা থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মাথা ঝোঁকান এই দরগাতে। এই মাজারের নামে সেই অঞ্চলের নামকরন হয়েছে পীরতলা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় – বহু বছর আগে এখানে একজন মুসলিম বৃদ্ধ থাকতেন। তিনি ছিলেন একজন ওঝা। আশেপাশের বাসিন্দারা তাদের বাচ্চাদের অসুখ হলে পীর বাবার কাছেই যেতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল ওঝার দেওয়া জল পড়া, তেলপড়াতে অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তবে থেকেই উভয় সম্প্রদায়ের বহু সাধারন মানুষ আসেন এই মাজারে।
বহু সময় পার হয়েছে। বৃদ্ধ ওঝা আর বেঁচে নেই। তবে সম্মানের সাথে রয়ে গেছে তার মাজার। বহু দিনের পুরোনো হওয়ার কারনে যখন এই মাজার সংস্কারের প্রয়োজন হয়। এগিয়ে আসেন উভয় ধর্মের বহু মানুষ। দীর্ঘ ২ মাসের সংস্কারের পর নতুন রূপে সেজে উঠেছে এই মাজার। মাঘ মাসের ১ তারিখে এই মাজারে প্রতিবছর পালিত হয় পাগলা পীরের ওরস উৎসব। মাজারের এই নতুন রূপের উন্মোচন ঘটেছে এই বছরের ওরস অনুষ্ঠানেই। ওরস অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই ভীড় করেন বহু মানুষ। সন্ধ্যা নামতেই উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। ধূপ, মোমবাতি দিয়ে চলে পূজার্চনা। পাশাপাশি চলে প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যাকালীন সঙ্গীতানুষ্ঠান। তবে এ বছর করোনার কারণে অনুষ্ঠান পালিত হয় আড়ম্বরহীন ভাবেই। মাজার কর্তৃপক্ষের তরফে সকলকে পোস্টারের মাধ্যমে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়।
মাজার সংস্কারের কারনে খুশি স্থানীয় সকল সাধারন মানুষ। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান- “এই মাজার হিন্দু মুসলিম সকলের গর্ব। মাজারের ঠিক পাশেই রয়েছে নিত্যানন্দ গৌরাঙ্গ রাধা গোপীনাথ মন্দির। আমরা সকলে একে অপরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। এভাবেই শ্রীচৈতন্যদেবের সকলকে নিয়ে চলার আদর্শ আজও ছড়িয়ে রয়েছে নবদ্বীপের প্রতিটি অলি গলিতে।”
চিত্র ঋণ – শঙ্কর নারায়ণ সাহা
Discussion about this post