সালটা ১৯৩৭। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কিন্তু আন্দোলনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থেরও প্রয়োজন। সংগ্রামীদের ভাঁড়ার তখন প্রায় শূন্য। আন্দোলনের অন্যতম নায়ক রাসবিহারী বসু তখন ছিলেন জাপানে। আর সেখানেই রাসবিহারী ডেকে পাঠালেন তাঁকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ জাপানের পথে পাড়ি দেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না তাঁর। বার্মায় এসেই তাঁর জাদু প্রদর্শনীর যাবতীয় সরঞ্জাম চুরি হয়ে যায়। অথচ তিনিও অদম্য, খেলা তিনি দেখাবেনই। তাই খালি হাতেই রাসবিহারী বসুর কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তিনি। তারপর খালি হাতেই জাদু দেখাতে শুরু করলেন। তিনি আর কেউ নন, আধুনিক জাদুর জনক ‘জাদুসম্রাট’ প্রতুল চন্দ্র সরকার।
যতই খালি হাতে দেখান না কেন, তাঁর সেই জাদু দেখার জন্যই সেইসময় জাপানের মানুষ প্রায় পাগল হয়ে গেলেন। তিনি যেখানেই যান, সেখানেই হাজার হাজার লোক ভিড় জমায়। ফলে প্রচুর টিকিট বিক্রি হতে থাকল। সেই টিকিট বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠে আসতে থাকল হাতে। আর জাদু সম্রাট সেই টাকা তুলে দেন রাসবিহারী বসুর হাতে। এইভাবে অর্জিত সব টাকাই তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বার্থে দান করে ছিলেন।
জীবনের শুরুর দিকে জাদুর জগতে ব্যাপক প্রচার লাভের উদ্দেশ্যে একসময় তিনি নিজের পদবী থেকে ‘সরকার’ বাদ দেন। এরপর পদবী হিসেবে ইংরেজি ‘সোরকার’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেন। কারণ এই শব্দটির অর্থ ‘জাদুকর’। এরপর জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে ফের নিজের ‘সরকার’ পদবীই গ্রহণ করেন। তবে ‘Sarkar’ বা ‘স্যারক্যার’— কেমন যেন ইংরেজদের চাপিয়ে দেওয়া পদবী মনে হত। তাই নিজের নামের পদবীর বানান ‘Sorcar’ করে নিয়েছিলেন তিনি। তিনি ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মান, বেলজিয়াম ও জাপানে ম্যাজিশিয়ান ক্লাবের সদস্য এবং বিলেতের ‘রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি’র আজীবন সদস্য ছিলেন। জাদুসম্রাটের জীবনে জাদুর পাশাপাশি তাঁর বিপ্লবী সত্ত্বাটিও তাঁর আজীবন সঙ্গী ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের দুর্বল আর্থিক কাঠামোর মধ্যেও মানুষ তাঁকে ঘিরে জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের স্বপ্ন দেখার সাহস রাখতেন। পি সি সরকারের জীবনের এই নানা অজানা ঘটনাই হয়তো মানুষজনের কাছে তাঁকে রোলমডেল করে তুলেছে।
Discussion about this post