ফ্যাশন জগতে ‘ট্যাটু’ অথবা ‘উল্কি’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী হোক কিংবা খেলার জগতের তারকা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ট্যাটু করাতে দেখা যায় স্টাইলের অঙ্গ হিসেবে। আসলে সৃষ্টির শুরু থেকেই নিজেকে সুন্দর দেখানোর চেষ্টা মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। আমরা যদি বেশ কিছু বছর পিছিয়ে যাই ট্যাটুর উৎস খুঁজতে তাহলে দেখব ট্যাটু বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল।
সম্প্রতি পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু কিট আবিষ্কৃত হয়েছে। অনুমান করা যায়,এই ট্যাটু কিট খ্রিস্টপূর্ব ৫৫২০ থেকে ৩৬২০ সালের মধ্যের কোনো একটি সময়ের। খননকারীরা এই ট্যাটু কিট খুঁজে পান ১৯৮৫ সালে। ন্যাশভিলে একটি ব্রিজ তৈরির কাজ চলছিল। সেই সময়ে তারা এটিকে সাধারণ কোনো যন্ত্র ভেবেছিল। তিন দশকের বেশি সময় ধরে এটি এভাবেই পড়েছিল। তবে এখানেই বিভ্রান্তির শেষ হয়নি, পরবর্তীকালে প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেটার উলফ আবার এগুলোকে ওষুধের বান্ডিল ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। জু আর্কিওলজিস্ট তানেয়া পেরেসের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হবার পরে ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়। গবেষণায় উঠে আসা অন্য তথ্য। তারা বুঝতে পারেন এটি অন্য জিনিস। শেষে তারা বলেন ওটা ট্যাটু কিট।
জানা গিয়েছে, ট্যাটু কিটের মধ্যে ছিল টার্কির হাড় দিয়ে তৈরি ছুঁচ, পাথর, অর্ধেক শাঁস যুক্ত রঙ রাখার জায়গা। রেডিও কার্বন পদ্ধতির মাধ্যমে জানা গেছে ট্যাটুর জন্য ব্যবহৃত ছুঁচগুলো খ্রীষ্টপূর্ব ৫৫২০ থেকে ৩৬২০ সময়ের। এই আবিষ্কার এটাও বলছে যে উত্তর আমেরিকার মানুষরা পূর্ববর্তী ধারণার আরও হাজার বছর আগে থেকেই ট্যাটু আঁকার কাজ করত। তবে এই ট্যাটু কিটের সঙ্গে জড়িয়ে এক অলৌকিক কাহিনী। শোনা যায়,ওটজি নামে বিখ্যাত মমির দেহ থেকে থেকে পাওয়া গিয়েছিল সব থেকে পুরোনো ট্যাটু। বলা হয়েছিল মমিটি ৫২৫০ বছরের পুরনো। তার দেহ থেকে মিলেছিল ৬১টি ট্যাটু। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রিয়ার ওটজাল পর্বতমালায় মিলেছিল এক প্রাকৃতিক মমির সন্ধান। স্থানের নামানুসারে মমির নাম রাখা হয়েছিল ওটজি। এই মমির খোঁজ মেলার পর থেকেই ওটির উদ্ধার কার্যের সঙ্গে যুক্ত যারা ছিল তাদের সবার সঙ্গে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগই হঠাৎ মারা যান। তাই অনেকেই মমিটিকে অভিশপ্ত আখ্যায়িত করেন।
এই তথাকথিত অভিশপ্ত মমি ওটজিকে প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন জার্মানির পর্যটক হেলমুট সাইমন। কিন্তু খুব বেশিদিন তিনি অভিশাপমুক্ত জীবন কাটাতে পারেননি। ২০০৪ সালে হাইকিংয়ের সময় পড়ে গিয়ে মারা যান তিনি। রহস্যজনকভাবে ওটজিকে প্রথম দেখতে পাওয়ার স্থানের কাছেই তার মৃত্যু হয়েছিল। হেলমুটের মৃতদেহ উদ্ধারকারী দলের প্রধান ছিলেন ওয়ারনেক। হেলমুটের শেষ কৃত্যের এক ঘণ্টার মাথায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি। সবটাই কি ছিল নিছক কাকতালীয় নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক গভীর রহস্য! সর্বপ্রথম ওটজির দেহ পরীক্ষা করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ কনরাড স্পিন্ডলার।পরীক্ষার কিছুক্ষণ পরেই অদ্ভুতভাবে তিনি মারা যান মাল্টিপল সেক্লরোসিসে। এরপরই মৃত্যুর করাল গ্ৰাস কেড়ে নেয় ওই মমির ফরেন্সিক টিমের প্রধান রেইনার হেনকে। তুষার ধ্বসে মারা যান রেইনকে মমির কাছে নিয়ে যাওয়া পর্বতারোহী কার্ট ফ্রিৎজ। ওটজি উদ্ধারের ভিডিও করেছিলেন অস্ট্রিয়ার সাংবাদিক রেইনার হোয়েলজল। তিনিও ব্রেন টিউমারে প্রয়াত হন। এসব ঘটনাই কিন্তু ছিল রহস্যের চাদরে ঢাকা। তবে কী সত্যিই এই অভিশপ্ত মমির অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে পারেননি তারা!এ র উত্তর হয়তো লুকিয়ে সময়ের অপেক্ষায়।
Discussion about this post