স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করে ভারতবর্ষ, বর্তমানে বিশ্বের প্রগতিশীল দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম। তবে এই স্বাধীনতা লাভের পথ ছিল বেশ কঠিন, যার পেছনে রয়েছে অগুনতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লড়াই ও দীর্ঘ সংগ্রাম। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণায় প্রায় সকল বাঙালিদের মনে প্রথমেই আসে তার কথা যিনি প্রথম বলেছিলেন, “ভারত পুনরায় স্বাধীন হইবেই হইবে। এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের খুব বেশি বিলম্বও নাই।” তিনি সকলের প্রিয় সুভাষ চন্দ্র বসু। তাঁর অনুরাগীদের কাছে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ‘নেতাজি’। অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় এক শতক পার করেও নারায়ণগঞ্জের ‘বোস কেবিনের’ সাথে আজও জড়িয়ে রয়েছে নেতাজির কাহিনী।

নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশের অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। শহরের কাঁচাবাজারে দিগু বাবুর বাজারের রেললাইন ঘেঁষা ঘিঞ্জি পট্টিতে অবস্থিত বোস কেবিন। প্রাচীন এই দোকানটি সুস্বাদু পরটার সাথে খাসির মাংসের জন্য বিখ্যাত। তবে খাবারের পাশাপাশি নেতাজী ও বোস কেবিনের চায়ের কাহিনীর জন্য এই দোকান পরিচিত সকলের কাছে। বোস কেবিনের বর্তমান মালিক তারক চন্দ্র বসুর মতে, ” প্রায় শত বছর আগে তার ঠাকুরদা নৃপেন বসু এক কাপ চা খাইয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে। তবে তাঁর ‘হোটেল’ বা দোকানে নয়, পুলিশ স্টেশনে গিয়ে।”

সময়টা, উনিশ শতকের প্রথম দিক। ২৮ অক্টোবর, ১৯৩১ তারিখে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডুর্নো সাহেবের গুলিবিদ্ধ হওয়ায় সারা বাংলাদেশ জুড়ে ধরপাকড় শুরু হয়। চরমে উঠেছিলো ঢাকাবাসীদের উপর পুলিশের নির্যাতনও। সেই সময় ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর, নারায়ণগঞ্জের স্টিমারঘাটে পা রাখেন নেতাজী। তার লক্ষ্য ছিলো ঢাকায় যাওয়া। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ঘটনার পর নেতাজীকে নিয়ে এক অজানা আতঙ্ক ছিলো সাহেবদের মনে। যার ফলস্বরূপ তাকে ঢাকা যেতে না দিয়ে গ্রেফতার করা হয় স্টিমার ঘাটেই। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ থানায়।

নেতাজির গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে। তখনই নৃপেন বসু খবর পান নেতাজীকে আটকে রেখেছে নারায়ণগঞ্জ থানায়। সেই খবর পেয়েই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন চায়ের কেটলি নিয়ে। প্রথমদিকে তাকে নেতাজির সাথে দেখা করতে দেন না সাহেবরা। তবে হাজার বাধা কাটিয়ে তিনি চা তুলে দিয়েছিলেন নেতাজিকে। শোনা যায়, তার চা খেয়ে প্রশংসাও করেছিলেন নেতাজি। মূহুর্তের মধ্যে নৃপেন বাবুর এই সাহসিকতার কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। তার এই সাহসিকতার ঘটনায় দেশ মায়ের সেবার জন্য এগিয়ে আসেন বহু যুবকেরা। এরপর কেটে গেছে এক শতক। তবে নারায়ণগঞ্জের বোস কেবিনের চা নেতাজীকে খাওয়ানোর কিংবদন্তী নৃপেনবাবুর কথা আজও এলাকার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে।
Discussion about this post