কথায় বলে, শত খারাপের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে ছোট্টখাট্টো ভালো থাকার রসদ। বিশ্বব্যাপী মহামারী যেমন একদিকে কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ, তেমনই নতুন কিছু প্রাণের জন্মও দিচ্ছে সে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের আতঙ্কের মাঝেই কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখছে বেশ কিছু নতুন জীবন। বেশি দূর নয়, খোদ পশ্চিমবঙ্গেই। রাজ্যের দুই চিড়িয়াখানায় এখন নিয়ম করে বাড়ছে সদস্য সংখ্যা। আবার যে সে নয়! বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন কিছু প্রাণীরাই এখন সেই চিড়িয়াখানায় জন্ম দিচ্ছে তাদের সন্তানদের।
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিংয়ে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কে সর্বাধিক বিপন্ন রূপে চিহ্নিত হিমালয়ান প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম লাল পান্ডা তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। চিড়িয়াখানার বন্দীদশায় তাদের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৪-এ গিয়ে ঠেকেছে। সেই কারণেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আগামী সেপ্টেম্বরে চারটি লাল পান্ডা সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্কে ছেড়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি ২০২১-এর মধ্যে আটটি লাল পান্ডা জঙ্গলে ছাড়ারও পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। আপাততঃ সেপ্টেম্বরে সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্কে চারটি ছাড়ার পর বাকি চারটি আগামী বছর নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ছাড়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। শুধু পান্ডাই নয়, এই মহামারীর মধ্যেই চিড়িয়াখানার অন্যতম সদস্য এক লেপার্ডও দুটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে৷ যদিও তাদের এখনও চোখ ফোটেনি। এছাড়াও গত বছর জার্মানি থেকে আনা একটি টাকিন এবং হিমালয়ের এক গড়ালও একটি করে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে গত মার্চেই।
তবে শুধু দার্জিলিংই নয়, কোনও অংশে পিছিয়ে নেই আমাদের শহর কলকাতাও। এই লকডাউনের মধ্যেই চিড়িয়াখানার বিশেষ সদস্য অ্যানাকোন্ডার প্রজনন করাতে সক্ষম হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার মধ্যেই রাখা জলের পুল, পাথুরে জলময় শিলা এবং বিভিন্ন গাছপালা এই প্রজননে বিশেষ সাহায্য করেছে। আপাততঃ চিড়িয়াখানাটিতে চার ধরনের অ্যানাকোন্ডা রয়েছে, যার মধ্যে বৃহত্তম সবুজ অ্যানাকোন্ডা। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে এক আশীর্বাদ রূপেই দেখতে চাইছে। সাধারণতঃ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি যেমন প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, ব্রাজিল ইত্যাদিতেই অ্যানাকোন্ডার দেখা পাওয়া যায়। সেখানে আলিপুর চিড়িয়াখানায় থাকা এই চারটি অ্যানাকোন্ডার প্রজাতি প্রায় প্রধান আকর্ষণ হিসাবেই এতদিন দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল। আগামীতেও যে এই চিড়িয়াখানা এভাবেই অ্যানাকোন্ডার দৌলতে দর্শকদের টানতে সক্ষম হবে, এমনটাই আশা রাখছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post