পুরোনো কলকাতার অলিতে গলিতে কত বিখ্যাত মানুষের কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে তা হয়ত আজ অনেকেরই অজানা। কিন্তু একসময় সেই সব মানুষদের ঘিরেই তৈরি হত নানা গল্প-কথা। এখন সময় বদলেছে। সেই সব মানুষদের কাহিনী এখন ধুলোর আস্তরণে ঢাকা পড়ে গেছে। ইতিহাসে খুঁজলেও হয়ত খুব বেশি হদিশ মিলবে না তাঁদের। তবে একসময় এই কলকাতার বুকে তাঁরা ছিলেন ভীষণই জনপ্রিয়। এই রকমই একজন মানুষ ছিলেন তিনি। একসময়ে লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান। যার কাছে হাত পেতে টাকা নিত খোদ ইংরেজ বাহিনী। তিনি, লক্ষ্মীকান্ত ধর ওরফে নকু ধর।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/07/52451541_629741960799368_7459438065128308736_n-min.jpg)
কিন্তু ছাপোষা এক বাঙালি ঠিক কীভাবে হয়ে উঠল ইংরেজদের প্রিয়পাত্র? ইংরাজি ভাষাই বা তিনি শিখেছিলেন কিভাবে? তার পিছনেও রয়েছে এক গল্প৷ নকু ধর খুব সাধারণ বাঙালি কিন্তু ছিলেন না। সেই সময়েও বেশ ভালোই টাকা-পয়সা, প্রতিপত্তি ছিল তাঁর। ইতিমধ্যেই একদিন সকালে গঙ্গার ঘাটে জপ করার সময় তিনি দেখলেন জলে ভাসছে প্রায় প্রাণহীন এক দেহ। কাছে গিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করলে তিনি দেখলেন তা এক ইংরেজের দেহ এবং সেই দেহে প্রাণ অবশিষ্ট রয়েছে তখনও। বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে নকু ধর তাঁর ভৃত্যদের সাহায্যে সেই সাহেবের প্রাণ বাঁচান। ঠিক তারপরই সেই সাহেবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় এবং সাহেবের সাহায্যেই ইংরাজি শেখা শুরু হয় তাঁর। এরপর ইংরেজদের সঙ্গে মেলামেশাও বাড়তে লাগল নকু ধরের। ক্রমে হয়ে উঠলেন তাদের প্রিয়পাত্র। এরপর এক্কেবারে লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান রূপে মর্যাদা পেলেন তিনি। ইংরেজরা হাত পেতে টাকা নিতেন তাঁর কাছ থেকে৷ শুধু তাই-ই নয়, বিপদে-আপদে ধরের থেকে পরামর্শও নিতেন।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2020/07/91865787_3102243813148720_4551898368565051392_n-min.jpg)
এরপর হল সেই ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরলেন ক্লাইভ৷ বদলে এলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। সেই হেস্টিংসকেও অর্থ সাহায্য করতে লাগলেন নকু ধর। বাড়তে লাগল তার প্রভাব-প্রতিপত্তিও। তাঁর সাহায্যে মুগ্ধ হয়ে একসময় ইংরেজরা তাঁকে রাজা উপাধিও দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নিতে রাজি হননি। বদলে তাঁর নাতি সুখময় ধরকে রাজা বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। বলা বাহুল্য, ইংরেজরা সেই ইচ্ছে রেখেও ছিল। নকু ধরের নাতি সুখময় হয়েছিলেন সেই সময়ের রাজা। আর নকু ধর! আড়ালেই রয়ে গেছিলেন তিনি। সারাজীবন আড়াল থেকেই ইংরেজদের পাশে থেকে গেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুও হয়েছিল সেই আড়ালেই। ইতিহাস হয়ত তাঁকে আজ ভুলে গেছে৷ তবে পুরোনো কলকাতার কিংবদন্তীতে আজও বেঁচে রয়েছেন তিনি এবং তাঁর দান-ধ্যানের হিসাব।
Discussion about this post