বর্তমানের করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ বুঝতে পেরেছে পরিবেশের সুরক্ষা ঠিক কতটা জরুরি। পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে বাঁচাতে ইদানীং চারিদিকে চলছে গাছ পোঁতার উৎসব। সংগঠিত হচ্ছে পরিবেশ আন্দোলনও। জল-জঙ্গল-জমি লুঠের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে গোটা পৃথিবী জুড়েই। কিন্তু আদৌ কি সেগুলো কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারছে? কোথাও একটা ছন্দপতন দেখা যাচ্ছে না কি? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আঞ্চলিক কারণও আছে এর নেপথ্যে। কিন্তু প্রায় সকলেই একমত হবেন যে প্রকৃতির সুরক্ষার সাথে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে চাষবাসের সম্পর্ক। হাল-আমলে জোর দেওয়া হচ্ছে রাসায়নিক এবং কীটনাশক নির্ভর চাষবাসকে। শুধুমাত্র অধিক ফলন আর মুনাফাকে মাথায় রেখে যা ধ্বংস করে চলেছে পরিবেশ প্রকৃতির সমস্ত অনুপ্রাণ। এই সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলাকে থামিয়ে দেওয়ার একমাত্র উপায় প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাস। এমনই এক লড়াই তথা যাপনের কাজ করছে হুগলীর নালিকুলের একদল তরুণ-তরুণী।
কয়েক বছর ধরেই নালিকুলের এই দলটি প্রাকৃতিক উপায়ে চাষের উদ্যোগটি নিয়েছে। মূলতঃ গত বছর থেকে এই উদ্যোগটি গতি পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত এবং ভারতের বাইরের বেশ কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক উপায়কে কাজে লাগিয়ে ফসল ফলানো হচ্ছে রীতিমত। সেই পথেই প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাস করার পদ্ধতিতে জোর দিচ্ছেন নালিকুলের তরুণ দলটি। সঙ্গে রয়েছেন ক্ষুদ্র স্থানীয় চাষী এবং বিভিন্ন ভূমিহীন চাষীরাও। জমিতে হাতেনাতে আসল কাজটি তারাই করেন। তাদের ভাবনার বদলই মূল উদ্দেশ্য বলা যেতে পারে।
কিন্তু ঠিক কোথায় মিলবে এই বিষহীন ফসল? প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীকে সমাজের সব স্তরের মানুষের হাতে তুলে দিতে একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। চালু করেছেন এক বিপনন কেন্দ্র, ‘গ্রামের হাট’। গত রবিবারই উদ্বোধন হয়েছে সেটির। এখন নালিকুলের আশেপাশের অঞ্চলে চাষ হওয়া রাসায়নিক এবং বিষমুক্ত সমস্ত সামগ্রীর একমাত্র ঠিকানা এই দোকানঘরই। এই বছর মোট পাঁচ রকম দেশী ধান চাষ করা হয়েছে ‘গ্রামের হাট’-এর তরফে। তবে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা বিভিন্ন সামগ্রীই নয়। পাশাপাশি থাকছে হাতে ভাজা দেশী মুড়ি, খাঁটি মধু, ঘি, বাড়িতে বানানো ছাতু, হাতে দেওয়া বড়ি এবং আমসত্ত্বও।
এছাড়াও হস্তশিল্পের নানা সম্ভারেরও হদিশ মিলবে এখানে। চাষীরা যেখানে জমিতে ঘাস মারা ও পোকা মারা বিষ ব্যবহার করাকেই স্বাভাবিক উপায় বলে মনে করেন, সেই সময় এই উদ্যোগটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তা তরুণ দলটি। উদ্যোক্তাদের অন্যতম শিক্ষক দেবেশ সাঁতরা ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে জানান, বিষমুক্ত খাবার ও রাসায়নিকমুক্ত জীবনযাপনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে গ্রামের হাট। তবে সমস্যা একটাই। এই রকম খাদ্য বা জিনিসের উৎপাদক যেহেতু খুবই কম, তাই উৎপাদনও কম। ফলে দামও বাজারচলতি বিষ-কেমিকেল-ভেজালযুক্ত জিনিসের থেকে বেশ খানিকটা বেশি। তবে তাঁরা আশা রাখেন এই চিন্তার প্রচার হলে আরও বহু মানুষ এগিয়ে আসবেন বিষমুক্ত জীবনযাত্রার লক্ষ্যে। অনেকেই এই রকম জিনিস উৎপাদন করবেন। তবেই সত্যি হবে অনেকে কম দামে এই জিনিস ব্যবহার করার স্বপ্ন।
আগামী দিনে পরিবেশবান্ধব এবং বাস্তুতন্ত্রে সহায়ক নানা বিকল্প জিনিসের আঁতুরঘর হয়ে উঠুক ‘গ্রামের হাট’। সবাইকে পাশে নিয়েই পরিবেশ সুরক্ষার লড়াইয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যাবেন তারা। এই আশাতেই এখন স্বপ্ন বুনছেন নালিকুলের তরুণ-তরুণীর দল।
Discussion about this post