“ধর্ম হোক যার যার, বড় মা সবার।” এই মূলমন্ত্র মেনেই পুজো হয় নৈহাটির বড় মায়ের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখ লাখ ভক্তের ভিড় জমে নৈহাটিতে। এ বছরের পুজো ৯৪ তম। এইবারে গত ১৯ অক্টোবর থেকেই বড় মায়ের পুজো নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৪ হাত ২২ ফুটের এই প্রতিমা দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন ভক্তেরা। নৈহাটি অরবিন্দ রোডের ধর্মশালা মোড়ের রাস্তার ওপরেই তৈরি হয় এই প্রতিমা। আর সেখানেই পুজো হয় মায়ের। প্রাচীন আমলের প্রথা মেনেই কোজাগরী পূর্ণিমায় বড় মায়ের কাঠামো পুজো হয়ে থাকে।
এই বড় মায়ের পুজো শুরু করেন স্বর্গীয় ভবেশ চৌধুরী। তবে তখন পুজো হত ছোট প্রতিমার। একসময় তিনি তাঁর বন্ধুদের সাথে নবদ্বীপের রাসমেলায় যান। সেখানে বিশালাকার প্রতিমা মূর্তি দেখে সেই আদলে তিনি নৈহাটিতে কাঠামো বানিয়েছিলেন। তবে তখন সেই মূর্তির উচ্চতা এখনের মতন ছিল না। ধীরে ধীরে তা বাড়তে বাড়তে এখন উচ্চতা ১৪ হাত ২২ ফুট। চোখ ধাঁধানো এই বড়মায়ের গাত্র ঘন কৃষ্ণবর্ণ। সোনা ও রূপোর সাজে মায়ের প্রতিমা হয়ে ওঠে জীবন্ত। আর মায়ের চোখের মণি তৈরি হয় সোনা দিয়েই। সেই চোখ দেখলে মাকে কখনও উন্মাদ, আবার কখনও শান্ত বা দয়াময়ী মনে হয়। ৪ বছর আগে ১০-১৫ ভরির সোনা দিয়ে বড় মায়ের দুই কানের ঝুমকো বানানো হয়। যার শুধুমাত্র মজুরিই লাগে ৬ লাখ টাকা। আনুমানিক ২০০ কিলো রূপো আছে মায়ের, যার সমস্তটাই ভক্তদের দেওয়া।
পুজো কমিটি প্রতি বছর একটি বস্ত্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেখানে এই পুজোয় পাওয়া প্রায় ৭০০০ শাড়ি গরীব ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া যা বেনারসী শাড়ি থাকে, সেগুলো গরীব পরিবারের কারোর বিয়ের জন্য দান করে দেওয়া হয়। এছাড়া যা ফল জমে এই পুজোতে, সেই ফল, প্রসাদ এবং একটি মায়ের ছবি দিয়ে আসা হয় নৈহাটির পার্শ্ববর্তী হাসপাতালের রোগীদের।
ভাসানের আগে সব সোনা গয়না খুলে বড়মা’কে সাজানো হয় ফুলের সাজে। যার খরচ প্রায় ২ লক্ষ টাকা। সেই ফুলের সাজে মায়ের বরণ হয়। শুধুমাত্র মায়ের সোনার চোখের মণি মায়ের সাথেই ভাসান দেওয়া হয়ে থাকে। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, মায়ের বরণ করে থাকে ছেলেরা। বরণ শেষে ভাসানের দিন ঠিক বিকেল ৪ টের সময় মায়ের দড়িতে টান পড়ে। নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে এবং বড়মায়ের বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনও প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয় না। বড় মায়ের পুজোকে শুধুমাত্র ধর্মের সীমানায় বেঁধে রাখা হয়নি। এর চেয়ে বড় আর কিই বা হতে পারে! তাই মাকে ভক্তি দিয়ে ডাকলে মা কখনও মুখ ফেরান না, এটাই হয়ত মায়ের মমতা।
Discussion about this post