আধুনিক সময়ে রকমারি খাবারের ভিড়। কিন্তু তার মাঝেও বাংলার মিষ্টি আজও জগৎ খ্যাত। মিষ্টির নাম শুনলেই ভিজে যায় বাঙালির মুখ, আর তা যদি রসমালাই হয় তাহলে তো কোনও কথাই নেই। রসমালাই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। বাংলাই রসমালাইয়ের উৎপত্তি স্থল। রসগোল্লার থেকে উন্নত করে, বাঙালি ময়রা কৃষ্ণ চন্দ্র দাস প্রথম রসমালাই তৈরি করেন। কিন্তু এই দাবীর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। রসমালাইয়ের কথাতে প্রথমেই মনে আসে কুমিল্লার কথা। কুমিল্লার রসমালাই সারা বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত।
উনিশ শতকের প্রথম দিকে কুমিল্লায় ঘোষ সম্প্রদায়ের হাত ধরে রসমালাই তৈরী শুরু হয়। দুধ ঘন করে ক্ষীর বানিয়ে তাতে ছোট আকারের রসগোল্লা ভিজিয়ে যে মিষ্টান্ন তৈরি করে তা ক্ষীরভোগ নামে পরিচিতি পায়। ক্রমান্বয়ে এই ক্ষীরভোগ রসমালাই নামে পরিচিত হয়ে উঠে। শীতল ভান্ডার, পোড়াবাড়ি, জেনিস, জলযোগ বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান ছড়িয়ে আছে কুমিল্লাতে। তবে সবার মধ্যে ‘মাতৃভান্ডারের’ রসমালাই সবথেকে জনপ্রিয়। ১৯৩০ সালে বর্তমান সত্বাধিকারী শঙ্কর সেনগুপ্তের বাবা ফণীন্দ্র সেন এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে রসমালাইয়ের জন্য মাতৃভান্ডারের নাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের অঞ্চল এমনকি সারা দেশে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিনদেশি ও দেশি আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় নগরের মনোহরপুর এলাকার মাতৃভান্ডারের রসমালাই দিয়ে।
কুমিল্লার বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক লিখেছেন রসমালাই তৈরির পদ্ধতি তো সবাই জানে। তবু কুমিল্লার আসল মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের স্বাদ সবার থেকে আলাদা। এই স্বাদ বলে বোঝানোর মতো না। ঘন ক্ষীরের মধ্য থেকে তুলে ছোট মিষ্টিটি জিবে দিলে যেন আপনাতেই গলে যায় মুখের ভেতর। ক্ষীরটাও অসাধারণ!
ক্রেতাদের মতে, ব্যবসায়িক সততা তাদের সবচেয়ে বড় পুঁজি। আখাউড়া-দেবিদ্বর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে গরুর খাঁটি দুধ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। সেই দুধ জ্বাল দিয়ে খাঁটি কি না, নিশ্চিত হওয়ার পর কেনা হয়। মিষ্টি তৈরি করতে গিয়ে সামান্য কোনো ত্রুটির কারণে যদি গুণাগুণ নষ্ট হয়, তাহলে বিক্রি না করে সব মিষ্টি ফেলে দেওয়া হয়।মাতৃভান্ডারের ব্যবস্থাপক অনুপম দাসের কথায়, “মাতৃভান্ডার নামে এ মিষ্টি দোকান প্রতিষ্ঠিার পর তাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তাদের দোকানে উত্তম দে এবং ক্ষিতিষ মোদক নামে দুই জন অভিজ্ঞ কারিগর এই রসমালাই তৈরি করছেন। তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্মের কারিগররা রসমালাই তৈরি শিখে নিচ্ছেন।”
মনোহরপুরের আসল মাতৃ ভান্ডারের রসমালাইয়ের বর্তমান কারিগর উত্তম দে জানান, “৪০ কেজি দুধকে জ্বাল দিয়ে ১৪ কেজি মালাইয়ে রুপান্তর করা হয়। এরপর ছানায় সামান্য পরিমান ময়দা মিশিয়ে বানানো হয় ছোটো ছানার দানা।এই ছানা দানা জ্বাল দেওয়া মালাইয়ে মিশিয়ে তৈরী হয় দারুণ স্বাদের এই রসমালাই।”
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – মহঃ সাইফুল ইসলাম
Discussion about this post