চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়”। জীবনের চড়াই উৎরাইতে খেই হারিয়ে ফেলি আমরা প্রত্যেকেই। চরম দুর্দিনে মাথায় দানা বাঁধে ডিপ্রেশনের ভূত। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে চলে একাকীত্বের উদযাপন। কিন্তু এভাবে কি কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব? সমাধান খুঁজতে গেলে যে নামতে হবে বাস্তবের রণক্ষেত্রে। রোজ যেখানে চলছে হাজার হাজার প্রতিযোগিতা। যে লড়বে সেই টিকবে। আজ এমনই দুজনের কথা বলতে চলেছি যারা হেরে তলিয়ে যাওয়া তো দূর বরং শক্ত হাতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পরিস্থিতির মোকাবিলায়। শূণ্য থেকে শুরু করে যাঁদের মাসিক রোজগার আজ পৌঁছেছে ২ লাখের কাছাকাছি।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মরতা ছিলেন সাক্ষী গুহ। বাঙালি হলেও হরিয়ানার গুরুগ্রামের বাসিন্দা তিনি ও তাঁর মা দীপা গুহ। কিন্তু ভাগ্য দোষে হঠাৎ একদিন চাকরি খুইয়ে বসলেন সাক্ষী। এদিকে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ক্রমশ নিম্নমুখী। এমতাবস্থায় মেয়ের পাশে আর্থিকভাবে দাঁড়াতে উদ্যত হন মা। তাই ৬৭ বছর বয়সেও নেমে পড়লেন বিয়েবাড়িতে রাঁধুনির ভাড়া খাটতে। কিন্তু সেই উপার্জনে পাঁচজনের সংসার চালানোও একরকম দুসাধ্য। সাক্ষী তাই সিদ্ধান্ত নিলেন হোম ডেলিভারির ব্যবসায় এবার এগোবেন। প্রথমদিকে পথযাত্রীদের হাতে লিফলেট ধরিয়ে কিছু কাস্টোমার ধরা হয়। পরে লকডাউন পড়লেই শুরু হয় খাবারের অর্ডার আসা। তারপর নিজেদের ওই ছোট্ট রান্নাঘরটিই রাতারাতি বদলালো ক্যাফেতে। মেয়ের বুদ্ধি আর রান্নায় মায়ের হাত যশ, এই দুয়ে মিলে ২০১৯ সালেই শুরু হল ‘বেঙ্গলি লাভ ক্যাফে’র পথ চলা। ভাত, রুটি, সবজি, ডিম মাছ কোনো কিছুতেই যেন না নেই এই ক্যাফের। এমনকি দুর্গোৎসবে ভোগের খিচুড়ি, লুচি তরকারির জলখাবার কিংবা ঝালমুড়ির ঠেক কোনোটাই বাদ যায় না।
বর্তমানে এই ক্যাফে’র ব্যপ্তি ছড়িয়েছে সমগ্র হরিয়ানাতে। ক্যাফের মাসিক উপার্জনের বহর আজ প্রায় ২ লাখ। শুধু সাক্ষী গুহ বা দীপা গুহ নয় এই ক্যাফে বহু মহিলাকে কাজের হদিশ দিয়ে স্বনির্ভরও করেছে। অনলাইন হোক কি অফলাইন বাঙালি খাবারের জোগান এখানে সারাবছর। হরিয়ানার অবাঙালি মুখে বাঙালি খাবারের রুচি এনে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন তাঁরা। মা-মেয়ের এই জুটি আবারও প্রমাণ দিল বাঙালি কোনোদিনই হারতে শেখেনি শিখেছে লড়াইয়ে বাঁচতে।
Discussion about this post