উৎসব মুখর বাঙালির কাছে শরৎ কাল মানেই প্রথমেই মনে আসে ভালবাসার দুর্গোৎসব। বাংলায় দুর্গোৎসবের প্রচলনের ইতিহাস বহু প্রাচীন৷ প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পার করে বাঙালীর দুর্গা পুজো আজ জগৎ বন্দিত। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। কলকাতার সাথে জড়িয়ে আছে নবাব কিংবা ইংরেজ আমলে থেকে শুরু হওয়া বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুজোর ইতিহাস। তবে শুধুই প্রবীণতম পুজো নয়, কলকাতার বুকে শুরু হওয়া নতুন পুজো গুলিও দুর্গা পুজোর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিলোত্তমার বুকে সেই তালিকায় নতুন সংযোজন মেট্রোপলিটান দুর্গা বাড়ির পুজো।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/10/1-11-1024x576.jpg)
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর কলকাতা শহরে প্রায় ৩৫০০ বারোয়ারীতে দুর্গা পুজো হয়। এছাড়াও প্রায় ৮৫০ টি বাড়ির পুজো রয়েছে মহানগরীতে। তবে কলকাতায় নবীনতম দুর্গা মন্দিরটি হল শহরের ট্যাংরা অঞ্চলে অবস্থিত মেট্রোপলিটান দুর্গা বাড়ি। ২০১৩-এর নভেম্বর থেকে বেলে পাথর ও মার্বেল দিয়ে শুরু হয় এই মন্দির নির্মাণের কাজ। প্রায় ৩ বছর পার করে, এই মন্দির তৈরী সম্পূর্ণ হয় ২০১৬ সালে। স্থানীয়দের কথায়, মন্দির নির্মাণের আগে এই জায়গায় ছিল কচুরিপানায় ভরা ডোবা। বর্ধিষ্ণু মেট্রোপলিটান উপনগরীতে বারোয়ারীর পুজো সব মিলিয়ে মাত্র গোটা চারেক হয়। এই অঞ্চলের মধ্যে সামন্ত বাড়ির পুজো অন্যতম। কিন্তু সেই বাড়ির সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড়শো জন। ফলে এলাকাবাসীর সেখানে গিয়ে বাড়ির পুজোর স্বাদ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। যার ফলে এলাকাবাসী ঠিক করেন, এখানে সব দেবদেবীর একটা মন্দির হোক। তবে প্রাধান্য পাক মা দুর্গা। উদ্যোক্তাদের মতে, “দিনের প্রায় সর্বক্ষণ সবার জন্য খোলা থাকবে মন্দিরের দ্বার। মন্দিরের সুপ্রশস্ত চাতালে সকাল বিকেল সময় কাটাক মানুষ। সুখ দুঃখের কথা হোক তাদের মধ্যে।”
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/10/3-1-1024x576.jpg)
২০১৪ সালের দুর্গা চতুর্থীর দিন, ৪ঠা অক্টোবর মন্দিরের দ্বার খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। এই মন্দিরে মায়ের মূর্তি অষ্ট ধাতুর। চোখে বসানো কাট গ্লাস মার্বেল। এই মন্দিরে পরম নিষ্ঠার সাথে মায়ের নিত্য পূজার আয়োজন করা হয়। সকালে মঙ্গলারতি, বিশেষ উপাসনা, দুপুরে মায়ের অন্ন ভোগ, বিকেলে আরতি, রাত্রে লুচি ভোগের আয়োজন করা হয়। সপ্তাহে ২ দিন সাধারণ ভাতের বদলে খিচুড়ি ভোগ ও একদিন পোলাও দেওয়া হয়। এছাড়াও নিত্য ভোগে মা কে দেওয়া হয় পায়েস।
![](https://dailynewsreel.in/wp-content/uploads/2023/10/2-11-1024x576.jpg)
তবে শুধুই রাজ্য কিংবা দেশ নয়, বাঙালির দুর্গোৎসবের টানে বিদেশ থেকেও বহু পর্যটকেরা ভিড় জমান কলকাতায়। মেট্রোপলিটনের এই মন্দির তৈরি করার শুরুতে গড়া হয় এলাকাবাসীদের কমিটি। তার ওপর হয় ট্রাস্ট। এই মন্দিরের প্রবীণ পুরোহিতের মতে, “দুর্গাপুজোয় এই মন্দির প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে সবার বাড়ির পুজো। এখানেই পাত পেড়ে সবাই ভোগ খান। এখানেই দাওয়ায় বসেন। গল্প করেন, আড্ডা দেন জমিয়ে।”
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – সাংবাদিক অয়ন ঘোষাল
Discussion about this post